আপনি পড়ছেন

একসময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার থাকা ভারতের নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসে ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দেশটি। নয়াদিল্লির এই নীতিগত বাঁকবদলের পেছনে একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শিক কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আল-আকসা তুফান অভিযান শুরুর পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর নিন্দা জানান, যা ছিল বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম সারির প্রতিক্রিয়া। তার সরকার ইসরায়েলকে জোরালো রাজনৈতিক সমর্থন দেয় এবং জাতিসংঘে গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। এমনকি ২০২৫ সালের ৩ নভেম্বর ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করেন। ওই বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়।

অথচ ভারতের এই বর্তমান অবস্থান তার ঐতিহাসিক নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৯৪৭ সালে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন ভাগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ১৯৭৪ সালে প্রথম অ-আরব দেশ হিসেবে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) ফিলিস্তিনিদের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। এমনকি ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যেও ছিল তারা। যদিও ১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ১৯৯২ সালে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই নীতি পরিবর্তনের পেছনে প্রধান দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান অশোক সুভিন বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তার মতে, ভারতীয় গণমাধ্যম বর্তমানে জাতীয়তাবাদী সরকার দ্বারা প্রভাবিত, যা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে তিনি এও মনে করেন, অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিক এখনও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে অশোক সুভিন ইসলামের প্রতি বিদ্বেষকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি জানান, মোদি সরকার গাজার যুদ্ধকে ব্যবহার করে ভারতীয় সমাজে ইসলামভীতি ছড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে। তার মতে, জায়নবাদ ও হিন্দুত্ববাদের মধ্যে আদর্শিক মিল রয়েছে। উভয় মতাদর্শই সম্প্রসারণবাদ এবং অন্যদের, বিশেষ করে মুসলিমদের বর্জন করার নীতিতে বিশ্বাসী। উভয় পক্ষই মনে করে, অতীতে ভারত ও অধিকৃত ফিলিস্তিন যথাক্রমে হিন্দু ও ইহুদি সভ্যতার অংশ ছিল, যা বহিরাগতদের দ্বারা কলুষিত হয়েছে এবং এখন তারা সেই পুরোনো গৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট।

এই আদর্শিক মিলের প্রতিফলন দেখা যায় ভারতেও। ফরাসি সংবাদপত্র ‘লা মন্ড’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিছু কট্টর হিন্দুত্ববাদী ইসরায়েলের পক্ষে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত নেভার গিলনও হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। দেশের অভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সমর্থনে বিক্ষোভের অনুমতি দিলেও ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত সমাবেশগুলো দমন করেছে।

এই রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরিবর্তনের পাশাপাশি ভারত-ইসরায়েল সামরিক সম্পর্কও অত্যন্ত গভীর। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের মোট অস্ত্র বিক্রির ৪৩ শতাংশই কেনে ভারত, যা দেশটিকে তেল আবিবের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতায় পরিণত করেছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এবং ‘অভিন্ন শত্রু’ মোকাবিলার ধারণা থেকেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেদের দীর্ঘদিনের নীতি বদলে ফেলেছে নয়াদিল্লি।

পার্সটুডে অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.