শাহবাগে সংঘর্ষ ও শিক্ষক আটকের পর প্রাথমিকে দেশব্যাপী কর্মবিরতির ডাক

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে ঢাকার রাজপথে নামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। শনিবার শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষক আহত এবং পাঁচজন শিক্ষককে আটক করা হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন। এর প্রতিবাদে রোববার থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টা থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠনের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে তারা পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পদক্ষেপ নেয়, যা শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে রূপ নেয়। আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, এ ঘটনায় শিক্ষক নেত্রী খায়রুন নাহার লিপিসহ শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন এবং তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, শাহবাগ থেকে পাঁচজন শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটককৃতরা হলেন—জয়পুরহাটের মু. মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালীর লিটন মিয়া, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আব্দুল কাদের, ধামরাইয়ের শরিফুল ইসলাম এবং কুমিল্লার মো. সোহেল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দীন মাসুদ আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেওয়া হলে শিক্ষকসমাজ তা মেনে নেবে না এবং শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেবেন।’

সহকারী শিক্ষকদের প্রধান তিনটি দাবি হলো—বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা। শিক্ষকদের ভাষ্য, অন্যান্য সরকারি দপ্তরে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা দশম গ্রেড পেলেও, অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।

এই ঘটনার পর শিক্ষকরা পুনরায় শহীদ মিনারে ফিরে যান এবং সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন। তারা জানান, দাবি আদায়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

এদিকে, শিক্ষকদের এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা এবং তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের এই কর্মবিরতির ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।