গাজায় বিষাক্ত মাটি-পানি: ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের ভিত্তি

ইসরায়েলি হামলায় গাজার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি শুধু ঘরবাড়ি ধ্বংস বা মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের মূল ভিত্তি মাটি ও পানিকেও বিষাক্ত করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতির পর এই পরিবেশগত ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

গাজা শহরের একসময়ের প্রাণচঞ্চল শেখ রাদওয়ান এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য তৈরি একটি পুকুর এখন পয়োবর্জ্য, আবর্জনা ও দুর্গন্ধে ভরা। এই পুকুরের পাশেই আশ্রয় নিয়েছে বহু বাস্তুচ্যুত পরিবার, যা তাদের জন্য একই সঙ্গে আশ্রয় এবং মৃত্যুফাঁদ।

এমনই এক পরিবারের সদস্য গর্ভবতী উম্মে হিশাম সন্তানদের নিয়ে এই দুর্গন্ধময় পানির মধ্য দিয়েই যাতায়াত করেন, কারণ তাদের আর কোনো আশ্রয় নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ রাদওয়ান পুকুরের আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছি। এখানকার মশা, ক্রমবর্ধমান ময়লা পানি, চারপাশে ধ্বংসযজ্ঞ, সবকিছুতেই বিপদের ছায়া। আমার ও আমার সন্তানদের জন্য প্রতিদিনই নতুন হুমকি তৈরি হচ্ছে।’

এই পুকুরটি মূলত বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলি বোমা হামলায় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় এখন সেখানে সরাসরি পয়োবর্জ্য জমা হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না, ফলে পানির স্তর বাড়ছে এবং আশপাশের তাঁবু ও ঘরবাড়ি ডুবিয়ে দিচ্ছে।

গাজা শহরের পৌর কর্মকর্তা মাহের সালেম জানান, দুর্গন্ধ, মশা ও পোকামাকড়ের কারণে নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘পানির স্তর ছয় মিটার ছাড়িয়ে গেছে এবং চারপাশের সুরক্ষা বেষ্টনীও ভেঙে পড়েছে। এখন যেকোনো সময় শিশু, নারী, বৃদ্ধ বা এমনকি কোনো যানবাহনও এই পুকুরে পড়ে যেতে পারে।’ স্থানীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এই দূষিত পানি শিশুদের মধ্যে নানা রোগব্যাধি ছড়াতে পারে, কিন্তু বিকল্প না থাকায় মানুষ এটিই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত এক জলবায়ু সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আল-জেবেন বলেন, ‘গাজা এখন এক পরিবেশগত বিপর্যয়ের নাম। ইসরায়েলের গণহত্যা প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং ৬১ মিলিয়ন টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ তৈরি করেছে, যার বড় অংশই বিষাক্ত।’

তিনি আরও জানান, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস করায় ভূগর্ভস্থ এবং উপকূলীয় পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। এর ফলে গাজার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজার কৃষিজমিও ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অঞ্চলটি তীব্র খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, গাজায় সুপেয় পানির উৎস এখন অত্যন্ত সীমিত এবং যা অবশিষ্ট আছে, তাও দূষিত। সব মিলিয়ে, শেখ রাদওয়ানের বাতাস এখন কেবলই পচন আর মৃত্যুর গন্ধে ভারী।