সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত সাড়ে তিন লাখের বেশি সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেড দুই ধাপ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে এই শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত হবে এবং এতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় বাড়বে প্রায় ৮৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সম্প্রতি এই প্রস্তাবটি অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে এলো, যখন শিক্ষকেরা বেতন কাঠামো ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন। শিক্ষকদের তিনটি প্রধান দাবির মধ্যে এটি অন্যতম। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরিতে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।

এর আগে শনিবার রাজধানীতে শিক্ষকদের একটি পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জলকামান ব্যবহার করে, যাতে শতাধিক শিক্ষক আহত হন বলে জানা যায়।

বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকা মূল বেতনে চাকরি শুরু করেন। প্রস্তাবিত ১১তম গ্রেডে তাদের মূল বেতন হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। তবে শিক্ষকরা যে ১০ম গ্রেডের দাবি করছেন, সেখানে মূল বেতন শুরু হয় ১৬ হাজার টাকা থেকে।

সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে চার লাখের বেশি শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, যার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন। এখনো প্রায় ১৭ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই শূন্য পদগুলো পূরণ করা হলে বার্ষিক খরচ আরও প্রায় ৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়বে।

মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য এখন ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি। অন্যান্য সরকারি দপ্তরে একই যোগ্যতার কর্মকর্তারা ১০ম গ্রেডে বেতন পান। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেডও ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ নামে শিক্ষকদের আরেকটি অংশ সহকারী পদের বেতন ১১তম গ্রেডে নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে তারা বার্ষিক ও বৃত্তি পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খুলনায় এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি নতুন বেতন কমিশনকেও অবহিত করা হয়েছে।