প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য তৈরি হচ্ছে ডিএনএ বারকোড!

দেশের প্রতিটি পরিচিত উদ্ভিদ, প্রাণী ও ছত্রাকের ডিএনএ বারকোড তৈরির এক উচ্চাভিলাষী জাতীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি ডিএনএ তথ্যভান্ডার তৈরি করা। মঙ্গলবার দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

‘অ্যারাইজ’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগটি ন্যাচারালিস বায়োডাইভারসিটি সেন্টার, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম, ইউনিভার্সিটি অব টুয়েন্টে এবং ওয়েস্টারডিজক ইনস্টিটিউটের যৌথ অংশীদারত্বে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বহু মিলিয়ন ইউরোর অনুদানপ্রাপ্ত এই প্রকল্পের আওতায় নেদারল্যান্ডসের ৪৯ হাজার পরিচিত প্রজাতির ডিএনএ বারকোড তৈরি করা হবে, যা বিজ্ঞানীদের জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।

ন্যাচারালিসের ক্লাইমেট এডিটর শার্লট ক্লেইন জানান, চলতি সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া ‘অ্যারাইজ’ তথ্যভান্ডারে এরই মধ্যে দেশের ৮৪ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি, ৭৬ শতাংশ প্রাণী এবং ৪৪ শতাংশ ছত্রাকের বারকোড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্মার্ট ক্যামেরা, রাডারের তথ্য এবং অডিও রেকর্ডিং ব্যবহার করে বন্য প্রজাতির ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন। এছাড়া, প্রায় ২০০ জন সাধারণ নাগরিক বিজ্ঞানী নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তা করছেন। সংগৃহীত নমুনাগুলো ন্যাচারালিসে পাঠানোর পর সেগুলোর ছবি তোলা, সংরক্ষণ এবং ডিএনএ বিন্যাস করে চিহ্নিত করা হয়।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ইলাইন ভ্যান ওমেন ক্লুক জানান, এই কর্মসূচি পরিবেশগত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতি এবং নির্দিষ্ট প্রজাতিগুলো কেমন আছে, তা আমরা জানতে আগ্রহী। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জানা যাবে, কোন প্রাণী কাকে খাচ্ছে, জীবগোষ্ঠীর মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে এবং আমাদের বাস্তুতন্ত্র কতটা স্বাস্থ্যকর। প্রকৃতিকে আরও কার্যকরভাবে রক্ষা করার পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’

মানুষের কার্যকলাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্র কীভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তা মূল্যায়নে ‘অ্যারাইজ’ প্রকল্প এরই মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। হরিণের বিচরণ কমাতে বালিয়াড়িতে বেড়া দেওয়ার প্রভাব কিংবা উপকূলীয় বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র সামুদ্রিক জীবনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের বিজ্ঞানী এমিয়েল ভ্যান লুন জানান, এই প্রকল্প সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘যেখানে একজন বিজ্ঞানীকে শত শত ছবিতে থাকা প্রাণী শনাক্ত করতে দিনের পর দিন ব্যয় করতে হতো, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন একই কাজ মাত্র ১০ মিনিটে করতে পারে।’

এই প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো, ‘অ্যারাইজ’ তথ্যভান্ডারকে আন্তর্জাতিক ডিএনএ তথ্যভান্ডারের সঙ্গে যুক্ত করা, যাতে বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়। নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হওয়ায় এই কাজ চলমান থাকবে বলে জানান ইলাইন ভ্যান ওমেন ক্লুক। তিনি আরও বলেন, ‘এটি জরুরি যে কম পরিচিত প্রজাতিগুলোকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যাতে আমরা শুধু পরিচিত প্রজাতিতে পূর্ণ আরেকটি তথ্যভান্ডার তৈরি করে শেষ না করি।’