পালানোর সময় সেই ‘দুই শুটার’ গ্রেপ্তার

রাজধানীর পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই শুটারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার বিকেলে দেশত্যাগের চেষ্টার সময় কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রুবেল ও ইব্রাহিম, যারা পেশাদার ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে আফতাবনগরের বাসায় ফেরার পথে মামুন হামলার শিকার হন।

সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটের দিকে মামুন দৌড়ে হাসপাতালের ফটকের ভেতরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় পেছন থেকে দুই অস্ত্রধারী তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। হামলাকারীরা খুব কাছ থেকে মামুনের ওপর একাধিক গুলি চালায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মিশন শেষ করে কোমরে অস্ত্র গুঁজে পালিয়ে যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলাকারীদের মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিল এবং একজনের মাথায় ক্যাপ ছিল। তারা মোটরসাইকেলে এসে প্রথমে হাসপাতালের তিনতলার জানালায় গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, এরপর মামুনকে লক্ষ্য করে ছয় থেকে সাতটি গুলি ছোড়ে।

ঘটনার পর মামুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে মামুনের শরীরে মোট সাতটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়; যার মধ্যে মাথার নিচে, বাম পিঠে, বুকের ডান পাশে, বাম কবজিতে এবং ডান কবজির ওপরে গুলির ক্ষত ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মামুন ‘ইমন-মামুন গ্রুপের’ অন্যতম প্রধান এবং পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। একসময় তিনি আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী থাকলেও অপরাধ জগতের আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। এছাড়া, ১৯৯৭ সালে মোহাম্মদপুরে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি ছিলেন মামুন। সেই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের নাম উঠে আসে। ফলে পুরোনো শত্রুতার জেরে জোসেফের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। মামুন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন এবং এই মামলায় ২০ বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তি পান।

জামিনে মুক্তির তিন মাসের মাথায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মামুনের ওপর প্রথমবার হামলা চালানো হয়। সেই হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ভুবন চন্দ্র শীল নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, একটি সংঘবদ্ধ ভাড়াটে শুটার চক্র এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এর পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।