শেখ হাসিনা-কামালের মামলার রায়ের তারিখ আজ, ট্রাইব্যুনালে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) নির্ধারণ করা হবে। এই ঘোষণাকে ঘিরে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বরে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেকোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এমনকি তল্লাশি ছাড়া জনসাধারণ ও সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই তারিখ ঘোষণা করবে। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর এই মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের বিচারের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের জবাবে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি তার মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন।

যুক্তিতর্কে আমির হোসেন মামলার রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দি প্রত্যাখ্যানের আবেদন জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলার রাজসাক্ষী মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচতে চাইছেন।’

এই মামলার তৃতীয় আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনে তিনি আদালতে জুলাই-আগস্টের হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগকে সত্য বলে স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। প্রসিকিউশন তার শাস্তির বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে, তবে তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাস চেয়েছেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তিন আসামির বিরুদ্ধে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ৮৪ জন সাক্ষীর এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ও সংশ্লিষ্ট নথি মিলিয়ে মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা।

এদিকে, রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ লকডাউন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন জানিয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডে তারা কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন না।