আ. লীগের কর্মসূচি ঘিরে কঠোর পুলিশ, গুলিস্তানে আগুন, ব্যাপক ধরপাকড়

কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগের ডাকা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার গুলিস্তানে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয় এবং দেশের কয়েকটি জেলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলেও জানা গেছে।

এদিন বিক্ষুব্ধ জনতা গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থাকা কিছু ব্যানার ও আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তারা এ ধরনের কোনো ঘটনার খবর পায়নি।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে দলটির ৪২ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এর মধ্যে সাভার মডেল থানা এলাকা থেকে ২৮ জন, আশুলিয়া থেকে ১১ জন এবং ধামরাই থেকে তিনজনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ জানিয়েছে, যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধে তারা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টহল ও তল্লাশি চৌকি বসিয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে।

এদিকে, শরীয়তপুরের জাজিরায় ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করলে সেটির সামনের কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ সদস্যরা পিছু হটলে তারা একটি চিনির ট্রাকেও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে, লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় গত দুই দিনে বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের ১৭ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী ও নাশকতা আইনে মামলা ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

একই সময়ে কুড়িগ্রামেও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে গত দুই দিনে ৩৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জনকে গত ২৪ ঘণ্টায় আটক করা হয়। তবে কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতি জানিয়েছে, সেখানে লকডাউনের কোনো প্রভাব পড়েনি এবং সব রুটে যান চলাচলসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

এই উত্তেজনার মধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।