আপনি পড়ছেন

গাজায় প্রায় ৭ লাখ টন বর্জ্য জমে থাকায় ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি ও যন্ত্রপাতির তীব্র সংকটের কারণে পৌরসভাগুলো ন্যূনতম জরুরি পরিষেবাও দিতে পারছে না বলে শুক্রবার সতর্ক করেছে গাজা উপত্যকার পৌরসভা ইউনিয়ন।

গাজার সাম্প্রতিক ছবি

পৌরসভা ইউনিয়নের উপ-প্রধান আলা আল-বাত্তাহ আনাদোলুকে জানান, ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার কারণে অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস, জ্বালানির অভাব এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পৌরসভাগুলো ‘অসম্ভব এক সমীকরণের’ মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির এক মাস পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে পৌরসভাগুলো বাসিন্দা ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও দিতে পারছে না।

এই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গাজাজুড়ে বর্জ্যের বিশাল স্তূপ জমে যাওয়ায় আসন্ন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি জানান, উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ টন বর্জ্য জমা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলের তথাকথিত ‘হলুদ রেখার’ কাছাকাছি অবস্থিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য ফেলার স্থানগুলোতে ইসরায়েল প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্জ্যের স্তূপের কারণে মশা ও ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে এবং ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে।

আল-বাত্তাহ পৌরসভাগুলোর জন্য জ্বালানি সংকটকে এই মুহূর্তের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জরুরি সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, পৌরসভাগুলো জ্বালানি ধার করতে বাধ্য হচ্ছে এবং তা না পেলে পরিষেবা যান ও স্থাপনা চালাতে না পারায় দৈনন্দিন কার্যক্রম কমিয়ে আনতে হচ্ছে। জরুরি পরিষেবাগুলো চালু রাখতে পৌরসভাগুলোকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের জন্য তিনি আরব ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

পানি সংকট প্রসঙ্গে আল-বাত্তাহ বলেন, এটি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ, দুই বছরের গণহত্যা চলাকালে ইসরায়েল গাজাজুড়ে ৭০০টিরও বেশি কূপ ধ্বংস করেছে, যা পৌরসভার মোট কূপের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। তিনি জানান, গণহত্যার আগে যেখানে দৈনিক মাথাপিছু পানির পরিমাণ ছিল ৯০ লিটার, তা এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ লিটারে নেমে এসেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দুই বছরের যুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করায় পয়োবর্জ্য মাটিতে মিশে ভূগর্ভস্থ পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ২০ লাখ রৈখিক মিটার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসের কথা বলছি, এবং পৌরসভাগুলোর কাছে এগুলো মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।’

আল-বাত্তাহ জানান, গণহত্যা চলাকালে পৌরসভার কর্মীরা চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, বাকিরা বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘পেশাগত ও মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পৌরসভার ২০০ জনেরও বেশি কর্মী নিহত হয়েছেন।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাজায় পৌরসভার প্রায় ৫ হাজার কর্মী যুদ্ধ ও ক্রমাগত হামলার মধ্যেও ৭৩৫ দিন ধরে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন।

পৌরসভার ভবনগুলোতে হামলা প্রসঙ্গে আল-বাত্তাহ জানান, দুই বছরের যুদ্ধে সেগুলোকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গাজা শহর, খান ইউনিস এবং জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় পৌরসভার সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কয়েক ডজন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির সময় আরব রাষ্ট্র ও মিসরের দান করা ১৫টি বুলডোজার ইসরায়েল ধ্বংস করে দিয়েছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের গণহত্যায় পৌর ও পরিষেবা খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। আল-বাত্তাহ জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েল নতুন যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, যার ফলে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার, বর্জ্য অপসারণ, রাস্তা পুনরায় চালু এবং ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় পৌরসভাগুলোর সক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে।

গাজা গণমাধ্যম অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এই গণহত্যার ফলে প্রায় ৭ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে, যার নিচে যুদ্ধের সময় নিহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ চাপা পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৯,৫০০ ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন, যারা হয় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির নিচে চাপা পড়েছেন অথবা তাদের পরিণতি অজানা।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.