গভর্নর: পাঁচ ব্যাংক একীভূত করা ছাড়া পথ ছিল না

আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলে জানিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ রবিবার রাজধানীর বনানীতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইসলামীক ফাইন্যান্স সামিট’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন। গভর্নরের মতে, সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্বলতার কারণে গত ৫ নভেম্বর এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ৯ নভেম্বর গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বোর্ড সভায় এই পাঁচটি ব্যাংককে একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। নতুন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। এর পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানতকারীদের অর্থকে শেয়ারে রূপান্তর করে সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে, এই পাঁচটি ব্যাংকের আর্থিক ধসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠিতে ব্যাংকগুলোর মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কারণে অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। অন্যদিকে, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং ২০১৭ সাল থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিল এস আলম গ্রুপ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও এই গ্রুপের ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতি ছিল।

অনুষ্ঠানে গভর্নর ইসলামী ব্যাংকিং খাতের আরও গভীর সংকট তুলে ধরে বলেন, একটিমাত্র পরিবারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকটির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। তবে তীব্র তারল্য সংকটের পরও জনগণের আস্থায় ব্যাংকটি এখন স্থিতিশীল এবং চলতি বছর ইসলামি ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

আহসান এইচ মনসুর জানান, সাম্প্রতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ইসলামী ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীলতার দিকে ফিরছে এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। তিনি ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, উন্নত মানের অডিটিং এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। গভর্নর আরও জানান, বৈশ্বিক সেরা অনুশীলনকে প্রাধান্য দিয়ে একটি আধুনিক ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘পরিকল্পিত ও সুশাসিত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।’