পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে অর্থনীতি, ১৫ দিনেই এলো দেড় বিলিয়ন ডলার

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করছে প্রবাসী আয়ের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনেই দেশে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ১৫২ কোটি ২৭ লাখ ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। অর্থাৎ, দৈনিক গড়ে দেশে এসেছে ১০ কোটি ১৫ লাখ ডলার বা এক হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে মোট প্রবাসী আয় তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের মোট প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২৫ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৯৭৫ কোটি ডলার।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ এবং অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল।

রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘নগদ-ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত আগস্টের চ্যালেঞ্জিং সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতি এখন অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পর্যায়ে আছে এবং রিজার্ভ ও রপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট।

তিনি আরও জানান, দেশের অভ্যন্তরে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশ্বের প্রধান সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত এবং তারা স্বীকৃতিও দিয়েছে।

তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তাও দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে আনা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। অতীতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রকল্প এখন শুধু স্মারক বা ভাস্কর্যের মতো হয়ে আছে, শত শত কোটি টাকা খরচ করেও বাস্তবে খুব বেশি উপকার পাওয়া যায়নি।’ এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে আরও সংযম প্রদর্শনের কথা বলেন তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, জাতীয় উন্নয়ন শুধু অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য, যা বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। এ সময় তিনি প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজমেন্ট বোর্ড বিএপিও-নগদের চেয়ারম্যান কায়সার এ. চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।