চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে—এমন ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টার্মিনালের মালিকানা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের হাতেই থাকবে; একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুধু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে বিদেশি অপারেটর।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিষয়টি স্পষ্ট করতে একটি সহজ উপমা ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মনে করুন, গাড়িটা আমাদের, তারা শুধু ড্রাইভার। তাহলে গাড়িটা কি তার হয়ে গেলো?’। রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

একটি বৈশ্বিক অপারেটরের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বিডা চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশের বন্দরগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি এবং পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা। উদাহরণ হিসেবে তিনি ভিয়েতনামের কাই মেপ বন্দরের কথা উল্লেখ করেন, যা গ্লোবাল অপারেটরের মাধ্যমে প্রযুক্তিভিত্তিক পরিচালনায় এসে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, ৪০৫টি বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান বর্তমানে ৩৩৪তম।

ডেনমার্কের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে লালদিয়া চরে বিশ্বমানের একটি টার্মিনাল ডিজাইন ও নির্মাণ করবে। প্রায় ৬,৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের এই নির্মাণকাজ শেষ হতে তিন বছর সময় লাগবে। নির্মাণ শেষে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে তারা এটি পরিচালনা করবে এবং মেয়াদ শেষে সমস্ত স্থাপনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেবে। চুক্তির শুরুতে সাইনিং মানি হিসেবে সরকারের কোষাগারে ২৫০ কোটি টাকা জমা দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

এই প্রকল্পটি একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যেখানে কোনো সরকারি অর্থায়ন বা গ্যারান্টি নেই। ৩০ বছর মেয়াদি এই চুক্তির শর্তগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালিত হলে এর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। রাজস্ব আয়ের কাঠামো অনুযায়ী, অপারেটর যত কনটেইনার হ্যান্ডেল করবে, তার প্রতিটির জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট হারে ফি প্রদান করতে হবে। এমনকি কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ কম হলেও একটি ন্যূনতম নির্ধারিত অংকের ওপর ভিত্তি করে ফি দিতে তারা বাধ্য থাকবে। পুরো প্রক্রিয়াটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, হাম্বানটোটা চীনা ঋণে নির্মিত হয়েছিল এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা এর নিয়ন্ত্রণ হারায়। কিন্তু লালদিয়া প্রকল্পে বাংলাদেশ কোনো ঋণ নেয়নি, এটি সম্পূর্ণ বেসরকারি বিনিয়োগ। ফলে এখানে আর্থিক ঝুঁকি নেই। অপারেটর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে বা পরিচালনায় ব্যর্থ হলে সরকারের হাতে পারফরম্যান্স ভিত্তিক জরিমানা, হস্তক্ষেপ করার অধিকার এবং চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা থাকবে।

এই প্রকল্পের ফলে দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। বছরে অতিরিক্ত ৮ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ তৈরি হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে এবং খরচ কমবে। বর্তমানে যে আকারের জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে, তার চেয়ে দ্বিগুণ বড় কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দূরবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচলের পথও সুগম হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে আরও কয়েক হাজার মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। একইসঙ্গে দেশের তরুণ প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকরা একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন, যা ভবিষ্যতে তাদের দেশ-বিদেশে বন্দর পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে সহায়ক হবে।

জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেছে বিডা। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনসহ সব নিরাপত্তা সংস্থার জন্য বিদ্যমান প্রটোকল আগের মতোই কার্যকর থাকবে। ডেটা সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনিংয়ের মতো বিষয়গুলো সরকারের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হবে। লালদিয়া টার্মিনালকে দেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন পোর্ট’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.