জাতিসংঘ: খাদ্য নিজেই এখন অস্ত্র হয়ে উঠেছে
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ সতর্ক করে বলেছেন, সংঘাতকবলিত অঞ্চলগুলোতে খাদ্য নিজেই এখন একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। তিনি জানান, এসব অঞ্চলের সহিংসতা খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষকে চরম ও ভয়াবহ ক্ষুধার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সংঘাতজনিত খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিষয়ক ওই বৈঠকে আমিনা মোহাম্মদ বলেন, ‘যুদ্ধ ও ক্ষুধা প্রায়শই একই সংকটের দুটি ভিন্ন রূপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংঘাতকবলিত অঞ্চলে আটকে পড়া কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার কঠোর বাস্তবতা এটিকে নির্মমভাবে স্পষ্ট করে তুলেছে।’
সংঘাত কীভাবে খাদ্য প্রাপ্তির ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়, তা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘বুলেট আর বোমা সেইসব খেত ধ্বংস করে দিচ্ছে যেখানে ফসল ফলে, বাজারগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে যেখানে মানুষ ব্যবসা করে এবং কৃষকদের সঙ্গে পরিবারের সংযোগকারী রাস্তাগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধাও সমান শক্তি নিয়ে পাল্টা আঘাত হানে। খালি পেট হতাশাকে উসকে দেয়, হতাশা জন্ম দেয় বাস্তুচ্যুতি ও সহিংসতার। এর ফলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় এবং প্রায়ই খাদ্য উৎপাদনকারী ব্যবস্থাগুলোই ধ্বংস হয়ে যায়।’
আমিনা মোহাম্মদ জোর দিয়ে বলেন, ক্ষুধা বাড়তে থাকলে নিরাপত্তা পরিষদ তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘যেখানে মানুষ অনাহারে থাকে সেখানে শান্তি আসতে পারে না, আর যেখানে ক্ষুধা সংঘাত বাড়ায় সেখানে নিরাপত্তাও থাকতে পারে না।’
ক্রমবর্ধমান চাহিদার তথ্য তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বের ১৬টি ক্ষুধা হটস্পটের মধ্যে ১৪টিতেই সশস্ত্র সংঘাত তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।’ তিনি জানান, গত বছর ২৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ কোটি ৪০ লাখ বেশি। একই সঙ্গে ভয়াবহ ক্ষুধার শিকার মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে।
গুরুতর সংকটপূর্ণ অঞ্চলগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষুধা সংকট চলছে সুদানে, যেখানে দারফুর এবং কর্দোফানজুড়ে সহিংসতা দুর্ভিক্ষকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, গাজায় আগস্ট মাসে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি এখনো গুরুতর। হাইতি, ইয়েমেন, সাহেল এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও সংঘাতের এক দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে।
আঞ্চলিক সংকটের আন্তর্জাতিক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমরা এক আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে বাস করি, যেখানে এক অঞ্চলের সংঘাত অন্য মহাদেশগুলোতেও তার অভিঘাত পাঠায়।’ আমিনা মোহাম্মদ বলেন, ‘এটিই সংঘাতের নতুন হিসাব: যখন খাদ্য ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ করা হয় বা সেটিকে অস্ত্র বানানো হয়, তখন তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়ে।’
জাতিসংঘের উপপ্রধান আরও ব্যাখ্যা করেন যে, খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখার কৌশলের মাধ্যমে, যা আমরা প্রায়ই দেখছি, সম্প্রতি গাজায়ও দেখা গেছে’। এছাড়া ‘কৃষি ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা’, ‘সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করতে অবরোধ’ এবং ‘বাণিজ্য প্রবাহে পরিকল্পিত বিঘ্ন ঘটানো’র মতো কৌশলও ব্যবহার করা হচ্ছে।
বৈঠকে সভাপতিত্বকারী সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিও বলেন, ‘গাজা থেকে সাহেল, সুদান থেকে ইউক্রেন এবং হাইতির কিছু অংশে ক্ষুধাকে অস্ত্র বানানো হয়েছে, যা বন্দুক শান্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘকাল ধরে এক নীরব অবরোধ তৈরি করে রাখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনাহার কখনোই সংঘাতের স্বাভাবিক পরিণতি নয়। এটি একটি ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত, আইন ভাঙার এবং আমাদের অভিন্ন মানবতাকে অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.