মির্জা ফখরুল: দেশ একটি ক্রান্তিকাল পার করছে

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একটি ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ বা ক্রান্তিকাল হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশ একটি দোলাচলের মধ্যে রয়েছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনই একমাত্র বা শেষ লক্ষ্য নয়। তার মতে, মূল চ্যালেঞ্জ হলো দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। টেকসই রাষ্ট্র গঠনে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম এবং প্রশাসনের স্বাধীনতা ও শক্তি অপরিহার্য বলেও তিনি মনে করেন।

‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং এ সম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বিগত ১৬ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালানো দমন-পীড়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, এই সময়ে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এমন অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে কি না।’ এসব ঘটনা গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাসে নথিভুক্ত করার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিএনপির আদর্শিক অবস্থান স্পষ্ট করে দলটির মহাসচিব বলেন, বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়, বরং একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। সব ধর্ম, বর্ণ ও মতের মানুষকে নিয়ে একটি ‘রেইনবো স্টেট’ বা রামধনু রাষ্ট্র গঠনই তাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার—উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’

দেশে চলমান সংস্কারের বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি অনেক আগেই সংস্কারের দাবি তুলেছে। তাই এই দাবিকে কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হলে তা সংকীর্ণতার পরিচায়ক হবে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, একদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে দেশে সহিংসতা চলছে। এই ঘটনাগুলো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো বিশেষ মহলের সচেতন প্রচেষ্টা কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের রাজনৈতিক সংকটের মূলে ভিন্নমত সহ্য না করার প্রবণতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল কথা হলো—আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।’

এ সময় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়’ নীতির কথা স্মরণ করেন এবং বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণতন্ত্রের জন্য জনগণকে সংগঠিত করছেন বলে উল্লেখ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না এবং বইটির সম্পাদক বাবুল তালুকদারসহ অন্যরা।