যুবদল নেতা হত্যা: র‍্যাব ও পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যে ঘনীভূত রহস্য

ঢাকার মিরপুর অঞ্চলে রাজনৈতিক কোন্দল, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার ওপর আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বের জেরেই যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত সোমবার সন্ধ্যায় মিরপুর-১২ নম্বরের বি ব্লকে অবস্থিত ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি’ নামের দোকানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তিনজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা দ্রুত না চলায় আরিফ হোসেন নামে এক অটোরিকশাচালকের কোমরেও গুলি করে।

ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা জনি ভূঁইয়া নামের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব-৪ সাভার থেকে মনির হোসেন ওরফে পাতা সোহেল (৩০) এবং গাজীপুরের টঙ্গী থেকে মো. সুজন ওরফে বুক পোড়া সুজনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব জানায়, সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ আটটি এবং সুজনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে।

বুধবার কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট মাহবুব আলম জানান, গোলাম কিবরিয়া সম্প্রতি রাজনীতিতে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠায় পুরনো সহযোগীদের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। এই দ্বন্দ্বের জেরেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে। র‍্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া মনির হোসেনই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং এর জন্য বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।

র‍্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের মিরপুর অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘ফোর স্টার’ গ্রুপের সদস্য বলে উল্লেখ করেছে। তাদের তথ্যমতে, এলাকার চারজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চলা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে সম্মিলিতভাবে ‘ফোর স্টার’ গ্রুপ বলা হয়।

তবে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও আসামিদের পরিচয় নিয়ে পুলিশের বক্তব্য ভিন্ন। পুলিশের মতে, গ্রেপ্তারকৃতরা শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুনের বাহিনীর সদস্য। বিদেশে পলাতক মামুনই এলাকায় আধিপত্য ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছে। অতীতে কিবরিয়ার সঙ্গে মামুনের সখ্য থাকলেও রাজনৈতিক মেরুকরণে তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হয়।

র‍্যাব ও পুলিশের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের কারণে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী কে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের সংশ্লিষ্টতা এবং হত্যাকাণ্ডে লেনদেন হওয়া অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে তদন্ত চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া অন্য আসামিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।