ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকদের বিচার: দেশ ছেড়েও শেষরক্ষা হয়নি যাদের
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালানোকে অনেক স্বৈরশাসক নিরাপদ আশ্রয় মনে করেন। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নির্যাতন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধের দায় থেকে তারা শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাননি। আন্তর্জাতিক চাপ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রচেষ্টা এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা এমন অনেক শাসককে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

যুগোস্লাভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের ঘটনাটি এক্ষেত্রে অন্যতম উদাহরণ। নব্বইয়ের দশকে বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও কসোভোতে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার মতো ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সার্বিয়ার পুলিশ ২০০১ সালে তাকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে। মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০২ সালে তার বিচার শুরু হয়। তবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ২০০৬ সালের মার্চে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়। রায় কার্যকর না হলেও, একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করে।
আফ্রিকার দেশ চাদের সাবেক স্বৈরশাসক হিসেনে হ্যাব্রে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার শাসনামলে গোপন পুলিশ ‘ডিডিএস’ ব্যবহার করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা, গ্রেপ্তার বা নির্যাতন করা হয়। ক্ষমতা হারানোর পর তিনি সেনেগালে পালিয়ে যান। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের চাপের মুখে সেনেগাল সরকার ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি আফ্রিকান চেম্বার্স’ গঠন করে এবং তাকে বিচারের জন্য গ্রেপ্তার করে। প্রায় ৯৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং ডিডিএসের গোপন নথি প্রমাণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরের বিচারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছিল। সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে একটি শান্তিচুক্তির আওতায় তিনি নাইজেরিয়ায় নির্বাসনে যান। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র চাপের মুখে নাইজেরিয়া তাকে সিয়েরা লিওনের জন্য গঠিত বিশেষ আদালতের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। আট শতাধিক সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে ২০১২ সালে আদালত তাকে ১১টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
চিলির অগাস্তো পিনোশে ১৯৭৩ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তার শাসনামলে হাজার হাজার বিরোধী মতের মানুষকে হত্যা, গুম ও নির্যাতন করা হয়। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯৮ সালে তাকে যুক্তরাজ্যে গৃহবন্দী করা হয়। যদিও অসুস্থতার কারণে দুই বছর পর তাকে চিলিতে ফেরত পাঠানো হয়, কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ২০০৬ সালে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বলিভিয়ার সামরিক শাসক লুইস গার্সিয়া মেজা ১৯৮০-৮১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত হন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে পালিয়ে ছিলেন। ১৯৯৫ সালে ব্রাজিল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে বলিভিয়ার কাছে প্রত্যর্পণ করে। আদালত তাকে ৩৬টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার পর ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
কম্বোডিয়ার খেমাররুজ সরকারের অন্যতম নেতা ছিলেন খিউ সাম্পান। তার শাসনামলে (১৯৭৫-৭৯) দেশটিতে প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ সময় পর, ২০০৭ সালে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি বিশেষ আদালত তাকে গ্রেপ্তার করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা প্রমাণ করে যে 오랜 সময় পার হলেও অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।
ভেনেজুয়েলার মার্কোস পেরেজ হিমেনেজ ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৫৮ সালে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি প্রথমে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, পরে যুক্তরাষ্ট্র এবং শেষে স্পেনে আশ্রয় নেন। ১৯৬৩ সালে স্পেন তাকে ভেনেজুয়েলার কাছে প্রত্যর্পণ করে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, বিচার শুরুর আগেই সাজার মেয়াদ কারাগারে কাটিয়ে ফেলায় তিনি মুক্তি পান এবং পুনরায় স্পেনে নির্বাসনে যান।
আইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট লরাঁ ব্যাগবোর বিরুদ্ধে ২০১০ সালের নির্বাচনের পর সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালে তাকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) হস্তান্তর করা হয়। তবে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালে আইসিসি তাকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। যদিও নিজ দেশের একটি আদালত অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, রাজনৈতিক আশ্রয় বা নির্বাসন কোনো স্বৈরশাসকের জন্যই অপরাধের দায় থেকে মুক্তির চূড়ান্ত নিশ্চয়তা নয়। আন্তর্জাতিক সদিচ্ছা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের দাবি একসময় সফল হয়, যা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.