ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ: রাজধানীতে ৩ জনের মৃত্যু, একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত

সারা দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে, তীব্রতা ছিল ৫.৫। এই কম্পনের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

ভূমিকম্পের তীব্রতায় পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলি এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়। বংশাল থানা পুলিশ জানায়, নিহতরা ঘটনার সময় সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

ভূমিকম্পের পর রাজধানী জুড়ে আরও একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ভবন হেলে পড়া, ধসে পড়া এবং ফাটল দেখা দেওয়ার অসংখ্য ফোন কল আসে। আরমানিটোলায় একটি পাঁচতলা ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। এছাড়া কলাবাগান ও বাড্ডায় দুটি ভবন হেলে পড়ার এবং তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি ভবনে ফাটলের খবর পাওয়া গেছে। খিলগাঁওয়েও একটি ভবন ধসের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দল পাঠানো হয়।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে চলমান ক্রীড়া আসরেও। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি ভূমিকম্পের কারণে প্রায় তিন মিনিট বন্ধ ছিল। খেলোয়াড় ও আম্পায়াররা এসময় নিরাপত্তার জন্য মাঠেই অবস্থান করেন। পরে ১০টা ৪১ মিনিটে খেলা পুনরায় শুরু হয়। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তারা জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।

ভূমিকম্পের তীব্রতায় নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেককে বহুতল ভবন ছেড়ে দ্রুত রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেখানে অনেকেই তাদের জীবনে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আগে অনুভব করেননি বলে উল্লেখ করেন। মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘২০ বছরের জীবনে এমন কাঁপন দেখিনি’।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা ভূমিকম্পের বিষয়টি নিশ্চিত করে সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, এ ধরনের ভূমিকম্পের পর ছোট আফটার শকের সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যায়নি। এই কম্পন বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও হালকাভাবে অনুভূত হয়েছে।