ট্রাম্পকে মামদানি: ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ নয়, দেশের টাকায় দেশের উন্নয়ন চায় নিউ ইয়র্কবাসী

নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, শহরবাসী ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে করের অর্থ সরিয়ে এনে দেশের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চায়। শুক্রবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।

বৈঠকের পর ওভাল অফিসের বাইরে সাংবাদিকদের মামদানি বলেন, ‘গত নভেম্বরে যারা প্রেসিডেন্টকে ভোট দিয়েছিলেন, হিলসাইড অ্যাভিনিউ এবং ফোর্ডহ্যাম রোডে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন তারা ভোট দিয়েছেন? আমি বারবার দুটি প্রধান কারণ শুনেছি। একটি হলো, তারা অন্তহীন যুদ্ধের অবসান চেয়েছিলেন… এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন।’

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে করা মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মামদানি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলি সরকারের গণহত্যা চালানোর বিষয়ে কথা বলেছি এবং আমাদের সরকারের অর্থায়নের বিষয়েও বলেছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, নিউইয়র্কের বহু মানুষ চায় তাদের করের টাকা ‘নিউইয়র্কবাসীর সুবিধার জন্য এবং তাদের মৌলিক মর্যাদা নিশ্চিত করার সক্ষমতা অর্জনে’ ব্যয় হোক।

শহরের গভীর সামাজিক সংকট তুলে ধরে মামদানি উল্লেখ করেন যে, নিউইয়র্কে ‘টানা নবম বছরের মতো এক লাখের বেশি স্কুল শিক্ষার্থী গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কেবল মানবাধিকার অনুসরণেরই মরিয়া প্রয়োজন নেই, বরং আমরা নিউইয়র্কবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা পূরণেরও প্রয়োজন রয়েছে।’

নবনির্বাচিত মেয়র জানান, কুইন্সের জ্যামাইকার একজন ওষুধ বিক্রেতাসহ ট্রাম্পের অনেক ভোটারই বিদেশে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে তাদের ক্লান্তির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের করের টাকায় অন্তহীন যুদ্ধ চলতে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি আরও বিশ্বাস করি, আমাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুসরণ করতে হবে এবং আমি জানি, আজও সেগুলো লঙ্ঘিত হচ্ছে।’

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকটিকে ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করে মামদানি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকটির প্রশংসা করছি। তিনি যেমনটা বলেছেন, এটি ছিল নিউইয়র্ক শহরের প্রতি আমাদের উভয়ের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা বাড়ি ভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা সেসব বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি, যার মাধ্যমে মানুষকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি চলতি মাসের শুরুতে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা ও বর্ধিত সামাজিক পরিষেবাকে কেন্দ্র করে প্রগতিশীল কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনে লড়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বারবার এই গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আক্রমণ করেছিলেন এবং মামদানি জিতলে নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে, দুজনের মধ্যে ওভাল অফিসে উষ্ণ আলোচনা হয়, যাকে তারা ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প এ সময় বলেন, ‘তিনি যত ভালো কাজ করবেন, আমি তত খুশি হব।’