‘পালানোর উচ্চ ঝুঁকি’, গৃহবন্দি বলসোনারোকে আবারও হেফাজতে নিলো ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে আবারও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় পায়ে পরানো নজরদারি ব্রেসলেট ভেঙে পালানোর পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বলসোনারোর পলায়নের ‘উচ্চ ঝুঁকি’ থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) আদালতের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বলসোনারো তার পায়ে থাকা ব্রেসলেটটি ক্ষতিগ্রস্ত করার কথা স্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ‘কৌতূহলবশত তিনি সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করেছিলেন।’ ভিডিওতে দেখা যায়, যন্ত্রটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও পোড়া, যদিও সেটি তখন পর্যন্ত তার পায়েই লাগানো ছিল। চূড়ান্ত আপিল প্রক্রিয়া চলাকালে বলসোনারো যেন পালাতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

৭০ বছর বয়সী বলসোনারো ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার ক্ষমতা গ্রহণ ঠেকাতে ব্যর্থ অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আপিল চলাকালে গত আগস্ট মাস থেকে তিনি রাজধানী ব্রাসিলিয়ার একটি বিলাসবহুল কন্ডোমিনিয়ামে গৃহবন্দি ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরায়েস জানিয়েছেন, বলসোনারোর পালানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তার বড় ছেলে ফ্লাভিও বলসোনারো শনিবার কন্ডোমিনিয়ামের বাইরে একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে ফ্লাভিও সমর্থকদের দেশের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বিচারপতির সন্দেহ, এই সমাবেশের বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়েই বলসোনারো পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

বিচারপতি বলেন, ‘শনিবার ভোরে ব্রেসলেট নষ্ট করার চেষ্টাটি ছিল তার পলায়নের সাফল্য নিশ্চিত করার পরিকল্পনার অংশ, যা ছেলের ডাকা বিক্ষোভের বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সহজে বাস্তবায়ন করা যেত।’ একইসঙ্গে তিনি বলসোনারোর আইনজীবীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, ফ্লাভিও একটি সরাসরি ভিডিওতে বিচারককে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি জানি না ফেডারেল পুলিশের ভেতর কী হচ্ছে। যদি আমার বাবার সঙ্গে কিছু হয়, আলেক্সান্দ্রে দে মোরাইস, যদি তিনি সেখানে মারা যান, তাহলে এটা আপনার দোষ।’

বিচারপতি মোরায়েস আরও উল্লেখ করেন, বলসোনারোর বাড়িটি মার্কিন দূতাবাসের কাছে হওয়ায় তার রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে। সাবেক এই সেনা অধিনায়ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ট্রাম্প এই বিচারকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক শিকার’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এর জেরে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

শনিবার ট্রাম্প জানান, তিনি গত রাতে বলসোনারোর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং খুব শীঘ্রই তার সঙ্গে দেখা করবেন। তবে আটকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। এটা দুঃখজনক। আমি কিছু শুনিনি।’

ক্ষমতায় থাকাকালে বলসোনারো অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে প্রশংসা পেলেও আমাজন বন উজাড় এবং কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় উদাসীনতার জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে তাকে এমন একটি অপরাধী চক্র পরিচালনার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যারা তার স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে তৎকালীন বিরোধী নেতা লুলা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলক্সিন ও বিচারপতি মোরায়েসকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।