চট্টগ্রাম নগরী ভূ-অবস্থানের কারণেই বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ব্যাপক বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন, দুর্বল তদারকি ও ভূগর্ভস্থ পানির অবাধ উত্তোলন মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম নগরী

তাদের মতে, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রা বা তার বেশি ভূমিকম্প হলে বন্দরনগরীর অন্তত ৭০ শতাংশ বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরে মোট ৪,১১,৭২১টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে- ৩,৮৭,৭৫৭টি ছয়তলা পর্যন্ত, ১৩,৪৮০টি সাত থেকে দশতলা, ৪১৫টি ১১-১৫ তলা, ৫০টি ১৬-২০ তলা এবং ৯টি ২০ তলার বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলোর একটি বড় অংশই বিল্ডিং কোড মানা ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মাণসামগ্রীর ক্ষয়ও বেশি হয়। সংকীর্ণ রাস্তা ও অননুমোদিত গলিপথ ভবিষ্যৎ উদ্ধারকাজেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রশিদুল হাসান বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ না করার ফলেই ভবনের ভূমিকম্প-ঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অসংযতভাবে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন মাটির চাপ কমিয়ে দেয়, ফলে মাটির উপরিভাগ বসে যায়, যা বহুতল ভবনের ভিত্তিকে দুর্বল করে।

নভেম্বরের ২১ তারিখের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মনসুরাবাদের একটি ছয়তলা ভবন আরও বেশি হেলে পড়ে। ২০১৬ সালের ভূমিকম্পে একই ভবনসহ নগরের আরও ১১টি ভবন হেলে পড়েছিল।

১৯৯৭ সালের ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে পাঁচতলা একটি ভবন ধসে ২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে নগরের ৬৫–৭০ শতাংশ বহুতল ভবনে ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি বলেন, রাজউকের মতো সিডিএর নিজস্ব স্ট্রাকচারাল ও ডিজাইন সেল নেই। কর্মীবাহিনীর সংখ্যাও কম-যার ফলে নিয়মিত পরিদর্শন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ড. রশিদুল বলেন, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও সিলেটই ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকির এলাকায় পড়ে।

তিনি আরও যুক্ত করেন, বিল্ডিং কোড মানার প্রবণতা কম, অনেক ভবন বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধান ছাড়া নির্মিত-এটি মারাত্মক ভুল।

ড. রশিদুলের সুপারিশ- ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে রেট্রোফিটিং করা, অতি পুরোনো ও অকার্যকর ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলা, নতুন ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানা এবং ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, সম্পূর্ণ ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ ব্যয়বহুল হলেও ভূমিকম্প-সহনশীল ভবন নির্মাণ অবশ্যই সম্ভব এবং তা ঝুঁকি কমাবে।

তার মতে, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উদ্ধারের জায়গা ও প্রবেশপথের ঘাটতি, কারণ অনেক ভবনে জরুরি প্রবেশ–প্রস্থান পথ নেই।

২০১৬ সালে হেলে পড়া ভবনগুলো কেন এখনো ভাঙা হয়নি এমন প্রশ্নে সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএ কেবল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করতে পারে; ভবন ভাঙার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি)।

তিনি বলেন, আমরা ১০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে সিসিসিকে তালিকা দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিসিসি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নিচ্ছি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.