রিজওয়ানা হাসান: গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা না করলে ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না

রাজধানী ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে এর উন্নয়ন কৌশলে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, অতিরিক্ত কংক্রিট-নির্ভর উন্নয়ন শহরটিকে অনিরাপদ ও অব্যবস্থাপনযোগ্য করে তুলেছে। আজ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে সমস্যা নিয়ে কথা বলি কিন্তু সমাধানের জন্য দ্বিধা করি। এসব মোকাবিলায় সাহসী চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করতে হবে, কারণ সেই ধারা আমাদের স্পষ্টভাবে ব্যর্থ করেছে।’

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় রাজউক ‘ম্যাস ট্রানজিট করিডোর বরাবর ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়নের জন্য নীতিমালা ও নির্দেশিকা প্রণয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অর্থবহ সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের কথা তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান ক্ষমতায়িত সংস্থা, উন্নত সমন্বয় এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্গঠনের আহ্বান জানান।

ঢাকার ভঙ্গুর পরিবহন ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গণপরিবহন এখনও অসংগঠিত এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি যোগ করেন, ‘প্রতিদিন কালো ধোঁয়া ছড়ানো বাস রাস্তায় চলছে। এসব যানবাহন প্রতিস্থাপন এবং আমাদের পরিবহন কার্যক্রম নতুন করে সাজানো ছাড়া ঢাকাকে বাসযোগ্য করা যাবে না। একটি স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা বিলাসিতা নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয়তা।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন (টিওডি) স্মার্ট পরিবহন কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে তা অবশ্যই পরিবেশের অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করে নয়। তিনি বলেন, ‘মেট্রো স্টেশন বা বাণিজ্যিক কাঠামোর জন্য উন্মুক্ত স্থান এবং পরিবেশগত সুরক্ষাবলয় বিসর্জন দেওয়া যাবে না। ঢাকার মানুষের নিশ্বাস ফেলার জায়গা খুব প্রয়োজন।’

পুরোনো ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে ধীরগতি এবং বারবার ঘটা শহুরে দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রায়ই সংস্কার আটকে দেয়। সবুজায়ন উদ্যোগে সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো শহর ধুলোময় দেখায়। যদি সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা যায় এবং সরকার কারিগরি সহায়তা দেয়, তবে তারাই আমাদের তৈরি করা সবুজের রক্ষক হয়ে উঠবে।’

রিজওয়ানা হাসান টিওডি উদ্যোগের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কারণ এতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান, পার্ক এবং সবুজ এলাকা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, ‘ঢাকায় ইতিমধ্যে যথেষ্ট বাজার রয়েছে। যা নেই তা হলো উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সহজলভ্য স্থান।’

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ এবং জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি জনাব ইচিগুচি তোমোহিদে।