সংস্কারের নামে যেন রাষ্ট্রকাঠামো না ভাঙে, সতর্ক করলেন আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ধারণক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত সংস্কার করতে গেলে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালতের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সংস্কার রাতারাতি সম্ভব নয় এবং এটি কোনো জাদুকরী প্রক্রিয়া নয়। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বড় ধরনের সংস্কার বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে। সুযোগ আসলেই সবকিছু আইনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেই সংস্কার হয়ে যায়, এ ধারণা ভুল।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, অতিরিক্ত বা অবিবেচিত সংস্কার রাষ্ট্রকাঠামোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার মানেই সংবিধান পরিবর্তন নয়; অনেক বড় পরিবর্তনও আইনের মাধ্যমেই আনা সম্ভব যেমন- ভ্যাট চালু করা বা এসিড সন্ত্রাস দমনের আইন।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকার বিদায় নেওয়ার আগেই দেশের ৬৪ জেলায় বাধ্যতামূলক লিগ্যাল এইড কার্যক্রম চালু করা হবে। বর্তমানে ২০ জেলায় এটি শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের ফলে দেশে মোট মামলার সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি।

পারিবারিক আদালতে সরাসরি মামলা দায়েরের প্রয়োজন না থাকায় মানুষ বিনা খরচে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে সমাধান পাবে বলেও জানান তিনি।

বিচার বিভাগকে ‘পেপারলেস’ করার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মামলা দায়ের, নথি ব্যবস্থাপনা, শুনানি ও রায় সবই অনলাইনে আনা হবে। এতে দুর্নীতি, ভোগান্তি, সময় ও খরচ কমবে।

ডিজিটালাইজেশনে আইনজীবীদের কাজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিকার সহজ হলে মামলা বাড়বে, ফলে আইনজীবীদের কাজও বাড়বে।

প্রযুক্তির ব্যবহার তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হোয়াটসঅ্যাপকেই বড় অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, বক্তৃতার খসড়া হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর আধা ঘণ্টার মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা তা সম্পাদনা করে ফেরত দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ বিচারপ্রার্থীদের জন্য কখনোই ‘ফ্রেন্ডলি’ ছিল না। সার্ভার ডাউনসহ প্রযুক্তিগত বাধা না এলে ই-পারিবারিক আদালত মানুষের বাস্তব উপকারে আসবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ই-পারিবারিক আদালত চালুর ফলে মামলা জট, সময় ও শ্রম সবই কমে যাবে।