ভেস্তে যাওয়ার পথে গাজার যুদ্ধবিরতি, ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ইসরায়েলের এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ‘ভঙ্গুর’ যুদ্ধবিরতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করছে।

জাতিসংঘের র‍্যাপোর্টিয়াররা জানান, গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৩৯৩ বার এটি লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় ৭০ জনের বেশি শিশুসহ ৩৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। তারা আরও যোগ করেন, গত ২৮ অক্টোবর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হন, যা যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী রাত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও মানবিক সহায়তার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। ছয়টি প্রবেশ পথের মধ্যে মাত্র দুটি খোলা রাখা হয়েছে এবং ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া, প্রধান হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে সরঞ্জাম ও রসদ প্রয়োজন।

বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তারা বেসামরিকদের ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বাড়তে থাকা সহিংসতার কথাও তুলে ধরা হয়, যেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং সেনারা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, তাদের ভূমি ও সম্পত্তির ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা পশ্চিম তীরের কিছু অংশের ওপর সার্বভৌমত্ব বিস্তারের লক্ষ্যে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের আইন প্রণয়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধেও সতর্ক করে এটিকে ‘সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালেও বিশেষজ্ঞরা জবাবদিহিতার অনুপস্থিতির ওপর জোর দেন। তারা বলেন, ‘২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো স্থায়ী শান্তি আসতে পারে না। আমরা সতর্ক করেছিলাম যে, তথাকথিত শান্তি উদ্যোগ, যা এক পক্ষকে গাজার ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেয়, তা দখলদারিত্বের অবসান ঘটাবে না বরং একে আরও পাকাপোক্ত করবে। দুঃখজনকভাবে, এটাই আমাদের চোখের সামনে ঘটছে।’

তারা আরও যোগ করেন, ‘দুই বছরের গণহত্যা চালানোর পর, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।’

গত ৯ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, দৈনিক ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল সেই চুক্তি মেনে চলেনি এবং প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এক বর্বরোচিত অভিযান চালিয়ে বেশিরভাগই নারী ও শিশুসহ প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে হত্যা এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষকে আহত করেছে। এই নৃশংস হামলায় উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।