উপদেষ্টা পরিষদ ও নতুন জোট গঠন করছে এনসিপি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দলটি একদিকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে যাচ্ছে, অন্যদিকে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে একটি নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে।

দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ নিতে এনসিপি একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ যাত্রা শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে এর সদস্য সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, বিতর্কমুক্ত এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন এমন ব্যক্তিদেরই এই পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের এতে রাখা হবে।

উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে গত ১৬ মে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এই কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত সম্ভাব্য সদস্যদের সঙ্গে বর্তমানে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে কথা বলছেন। দলের একজন নেতা জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। এই পরিষদটির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না; এটি মূলত দলকে নীতিগত পরামর্শ, কৌশল নির্ধারণে সহায়তা এবং সংকটকালে দিকনির্দেশনা দেবে।

সাংগঠনিক কাঠামোর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে যাচ্ছে এনসিপি। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই একটি নতুন রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ২৫ নভেম্বর রাতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘দেশবাসী একটি নতুন অ্যালায়েন্স দেখতে পাবে।’ তিনি আরও জানান, এই জোট বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যার মূল উদ্দেশ্য হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা।

এই জোট সংস্কার, নারী অধিকার এবং আলেম-ওলামাদের পক্ষে কাজ করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এনসিপির এই জোট গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুও গত ২৩ নভেম্বর ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে জানান, এনসিপিসহ কয়েকটি দল মিলে নতুন জোট গঠন করা হচ্ছে এবং জাতীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করে ভারত ও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তার মতে, ‘ভারত এবং আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক যে শক্তিগুলো ছিল, তারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে।’

উল্লেখ্য, এনসিপি আসন্ন নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে।