ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ধস, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ

ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম তলানিতে নামলেও দেশটির রপ্তানি খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। একটা সময় যারা ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল, সেই বাংলাদেশ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দেশটির পেঁয়াজ রপ্তানিকারক ও সরকারি কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক। মূলত, নয়াদিল্লির ঘন ঘন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

একটা সময় ভারতের মোট পেঁয়াজ রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসত বাংলাদেশে। তবে গত আট মাসে সেই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। যদিও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি, তবুও বাংলাদেশ খুব সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশ এখন বিকল্প হিসেবে পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে মোট ১৭ লাখ ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি হয়েছিল, যার মধ্যে ৪২ শতাংশ, অর্থাৎ ৭ লাখ ২৪ হাজার টন একাই কিনেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ ভারত থেকে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে, যা সংকটের গভীরতা তুলে ধরে।

ভারত সরকারের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের কারণে হতাশ হয়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশ একটি কূটনৈতিক নোটও পাঠিয়েছিল। বারবার রপ্তানি বন্ধ করার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সৌদি আরবের মতো বড় ক্রেতারাও ভারতীয় পেঁয়াজ কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। গত এক বছর ধরে সৌদি আরব খুব কম পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা এখন ইয়েমেন ও ইরান থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনছে।

এই সংকটের পেছনে আরও একটি কারণ হলো ভারতীয় পেঁয়াজের বীজের অবৈধ রপ্তানি। হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এইচপিইএ) সহসভাপতি বিকাশ সিং জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজ উৎপাদন করছে, যা ভারতীয় কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বোর্ড অব ট্রেডের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য পাশা প্যাটেলও একই সুরে বলেছেন, ‘আমরা শুধু ঐতিহ্যবাহী ক্রেতাদেরই হারাইনি, তারা ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।’

এইচপিইএ-এর সাবেক প্রধান অজিত শাহ বলেন, ‘একসময় আমরা আমাদের পণ্যের গুণমানের জন্য বাড়তি দাম পেতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে নিয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখন তারা আর আমাদের পেঁয়াজের গুণমানের দিকে তাকায় না, বরং প্রতিযোগীদের সঙ্গে দামের তুলনা করে।’ এই পরিস্থিতি ভারতের পেঁয়াজ বাণিজ্যের দীর্ঘদিনের আধিপত্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।