বৃত্তির বদলে ‘মেধা যাচাই’: আইনি জটিলতা এড়াতে নতুন কৌশল

দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগটি আইনি জটিলতায় পড়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ সংক্রান্ত এক রিটের পর উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ‘বৃত্তি পরীক্ষা’র পরিবর্তে ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’ নামে বিকল্প পথে এগোচ্ছে।

মূলত, এবারের বৃত্তি পরীক্ষায় শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রিটের শুনানি শেষে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আপিল করায় বিষয়টি এখন বিচারাধীন, যা বহুল প্রতীক্ষিত এই পরীক্ষাকে আটকে দিয়েছে।

আইনি লড়াইয়ের ফলাফল যাই হোক, অধিদপ্তর বিকল্প প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর যে তারিখে বৃত্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক সেই সময়েই ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’ আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষার মানবণ্টন, প্রশ্নের ধরন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি বৃত্তির মতোই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, শুধু নাম পরিবর্তন করে আইনি বাধা এড়ানোর একটি কৌশল নেওয়া হয়েছে।

এই বিকল্প পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। গত ১১ নভেম্বরের এক চিঠিতে ‘মেধা যাচাই পরীক্ষা’র সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। ১৯ নভেম্বরের আরেকটি চিঠিতে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা ফি নির্ধারণের কথা জানানো হয়, যদিও অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি মওকুফ থাকবে। এমনকি পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটও জেলা পর্যায়ের দপ্তরগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সরকারের এই নাম পরিবর্তনের কৌশলকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারের অনুমোদন নিয়ে একই সিলেবাস ও বই পড়িয়েও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছি। এটি শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা।’ তিনি জানান, অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। রাজধানীর এক বেসরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজিজাতুস সাদিয়ার মা আসমা আক্তার জানান, হাইকোর্টের রায়ের পর তার মেয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এখন বৃত্তি পরীক্ষা না হওয়ার খবরে সে হতাশ। তার মতে, সরকার এই সিদ্ধান্তটি ঠিক নেয়নি।

তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন এবং আপিলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আদালত যদি বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে তাই হবে। আপাতত মেধা যাচাই পরীক্ষাটা হচ্ছে।’ একই তারিখে দুটি পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে তিনি কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি, যা পুরো বিষয়টিকে আরও ধোঁয়াশাপূর্ণ করে তুলেছে।

জাগো নিউজ অবলম্বনে