তদন্ত কমিশন: বিডিআর হত্যাকাণ্ডে আ. লীগ দলগত ভাবে জড়িত, মূল সমন্বয়কারী তাপস

বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে কমিশন জানায়, এই হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল এবং মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।

রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানসহ অন্যান্য সদস্যরা প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানায়।

ফজলুর রহমান বলেন, ১৬ বছর আগের ঘটনাটির বহু আলামত ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তদন্ত ছিল অত্যন্ত জটিল। তবুও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সাক্ষ্যগ্রহণ, নথি যাচাই-বাছাই এবং আগের তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে।

কমিশন প্রধান বলেন, তদন্তে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সক্রিয় সম্পৃক্ততার শক্তিশালী প্রমাণ উঠে এসেছে।

কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত, এবং এর পেছনে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন।

তালুকদার বলেন, তারা ২০-২৫ জনের একটি মিছিল নিয়ে পিলখানায় প্রবেশ করে এবং বের হওয়ার সময় মিছিলের সদস্য সংখ্যা দুই শতাধিক হয়ে যায়।

জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার আরও বলেন, এই ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল।

তার ভাষ্য, দায় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন্ত অনেকেই দায় এড়াতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ, র‍্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা ছিল; কিছু গণমাধ্যম এবং কয়েকজন সাংবাদিকও সে সময় অপেশাদার আচরণ করেছেন।

কমিশন সদস্যরা জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যেসব বিডিআর সদস্যের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন, তাদের নাম–পরিচয়, বক্তব্য বা তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি, যা তদন্তকে আরও জটিল করেছে।

প্রতিবেদনে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, এবং অনুরূপ ঘটনা প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই অন্ধকার কেটে গেল। জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের এই ভয়াবহ ঘটনার বিষয়ে জাতির যেসব প্রশ্ন ছিল এই প্রতিবেদন সেসব প্রশ্নের সমাধান দেবে এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি হবে একটি মূল্যবান দলিল।

কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ছাড়াও সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।

প্রতিবেদন জমা অনুষ্ঠানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রতিরক্ষা ও সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।