গাজাবাসীর জন্য রাফাহ সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

গাজার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মানবিক সহায়তা ও বেসামরিক মানুষের চলাচল নিশ্চিত করতে তা পুরোপুরি খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েল ও মিশরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী খবর আসার পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই জোরালো দাবি জানানো হলো।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে অবগত আছেন। একদিকে ইসরায়েল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ক্রসিংটি শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে, অন্যদিকে মিশর এমন কোনো সমন্বয়ের কথা অস্বীকার করেছে।

ডুজারিক বলেন, ‘আপনাদের মতোই আমরাও পরস্পরবিরোধী খবরগুলো দেখেছি। আমরা যা দেখতে চাই তা হলো, মানবিক পণ্য ও ত্রাণকর্মীদের চলাচলের জন্য রাফাহ ক্রসিং পুরোপুরি খুলে দেওয়া হোক।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা যদি স্বেচ্ছায় ও কোনো চাপ ছাড়া এলাকা ত্যাগ করতে চান, তবে তাদের সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এছাড়া যারা আগে গাজা ছেড়েছেন এবং এখন ফিরে আসতে চান, তাদের ফেরার সুযোগ নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

ক্রসিং খোলার বিষয়টি ইসরায়েল ও মিশরের সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল হলেও ডুজারিক জোর দিয়ে বলেন, মানবিক প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া দরকার যাতে মানবিক পণ্য প্রবেশ করতে পারে, ত্রাণকর্মীরা আসা-যাওয়া করতে পারেন এবং যেসব ফিলিস্তিনি চলে যেতে চান তারা যেন নিরাপদে ও কোনো চাপ ছাড়াই তা করতে পারেন।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, তারা নিয়মিত খবর পাচ্ছে যে, ইসরায়েলি বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনায় গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংসযজ্ঞ বাড়ছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে ডুজারিক বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। তবে আমরা একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি পরিস্থিতির তুলনা করছি মাত্র।’

গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংটি খোলার কথা ছিল। তবে ইসরায়েল চুক্তি না মানায় তা বন্ধই থাকে। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের চলাচলে বাধা দিয়ে আসছে। এটিই ছিল গাজার একমাত্র পথ যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আগে তেল আবিবের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

গত শনিবার দক্ষিণ গাজায় ড্রোন হামলায় দুই ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যার ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে অভিহিত করেন ডুজারিক। তিনি বলেন, ‘৮ ও ১০ বছর বয়সী দুটি ছেলে কীভাবে হুমকি হতে পারে, তা বোঝা কঠিন। এ ঘটনার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

হামলার শিকার ওই এলাকাটি সেই জোনের মধ্যে অবস্থিত যা গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে।