জামায়াতের নির্বাচনে নতুন কৌশল: প্রার্থী তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অতীতে কেবল দলের শপথবদ্ধ বা রুকন পদধারী নেতাদেরই নির্বাচনী টিকিট দেওয়ার রেওয়াজ ছিল দলটির। তবে এবার সেই প্রথা ভেঙে ভিন্নধর্মাবলম্বীদেরও প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দলটির রাজনৈতিক কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কয়েক ধাপে দেশের ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে জামায়াত। তবে সময়ের প্রয়োজনে এবং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সম্প্রতি তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো খুলনা-১ আসনে একজন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া। দলটির সূত্র জানিয়েছে, সামনে আরও কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনেও একজন হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

খুলনা-১ আসনে জামায়াতের নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন কৃষ্ণ নন্দী। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। এর আগে এই আসনে বটিয়াঘাটা উপজেলার জামায়াত নেতা শেখ আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। গত বুধবার তাকে পরিবর্তন করে কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত করা হয়। যদিও কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনা-৫ আসনের চুকনগরে, তবু তাকে খুলনা-১ আসনে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ। ১৯৭৩ সাল থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ওই আসনে প্রায় সব সময় হিন্দু প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই জামায়াত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রার্থী পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে হবিগঞ্জ-৪ এবং লালমনিরহাট-৩ আসনও। হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুখলিছুর রহমানের পরিবর্তে নতুন প্রার্থী করা হয়েছে যুক্তরাজ্যফেরত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে। অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা মো. হারুন অর রশীদের বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মো. আবু তাহের। জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই রদবদল আরও বাড়তে পারে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, ২০০৮ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের সময় জামায়াত তাদের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনে। এরপর থেকেই অন্য ধর্মের অনুসারীদের দলে সম্পৃক্ত করার এবং প্রার্থী করার সুযোগ তৈরি হয়। তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ এবং জরিপের ফলাফলকে গুরুত্ব দিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। জয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারণী ফোরামে এসব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা চলছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। সেখান থেকে মুঠোফোনে তিনি জানান, যারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে চায়, তাদের দলে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা যার যার সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সংসদে যাবেন। জামায়াত সব ধর্মের মানুষের বিষয়ে সচেতন এবং জন-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েই এবার প্রার্থী নির্বাচন করছে।’

নির্বাচনী মাঠে জোটগত সমঝোতার বিষয়েও সক্রিয় রয়েছে জামায়াত। ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ নীতিকে সামনে রেখে আটটি সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, জাগপাসহ আরও কয়েকটি দল। আগামী ৮ ডিসেম্বর লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আসন সমঝোতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। কোন আসনে কোন দলের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তা যাচাই করতে বর্তমানে জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে দলগুলো।