আইজিপিকে সরাতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে নাম আসায় পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের মুখে তাকে পদে বহাল রাখা জনমনে ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ন্যাশনাল ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু এই চিঠিটি প্রেরণ করেন। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনো কর্মকর্তার নাম যদি রাষ্ট্রদ্রোহী ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উঠে আসে, তবে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পদের অপব্যবহার করে তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা থেকেই তাকে সরানোর দাবি জানানো হয়েছে।

এর আগেও একই কারণে গত ৪ ডিসেম্বর আইজিপিকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট শাহিন হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান তখন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের ওই নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। সেখানেও তদন্ত প্রতিবেদনে আইজিপির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ২০০৯ সালের বিডিআর সদর দপ্তরের নৃশংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সেই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, যা জাতীয় জীবনের এক করুণ অধ্যায়। এমন একটি স্পর্শকাতর ঘটনায় বর্তমান আইজিপির নাম আসায় ন্যায়বিচার ও জনআস্থার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

চিঠিতে আরও যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যদি কেউ এমন অভিযোগের তালিকায় থাকেন, তবে তা বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। ন্যায়বিচার শুধু আদালতের রায়ে নয়, সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপেও দৃশ্যমান হওয়া জরুরি বলে মত প্রকাশ করা হয়।

চিঠিতে দেশের বিচার ব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষায় তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করা হয়েছে। প্রথমত, তদন্ত রিপোর্টে নাম থাকায় আইজিপি বাহারুল আলমকে অবিলম্বে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট সবার দায় নিরূপণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তৃতীয়ত, স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যাতে রাষ্ট্র ও জনগণ ন্যায়বিচারের প্রতিফলন দেখতে পায়।