কৃষ্ণসাগরে বিকল জাহাজে আটকা মাহফুজুল, চরম ঝুঁকিতে ১০ নাবিক

কৃষ্ণসাগরের বুকে ভাসমান একটি জাহাজ। ড্রোন হামলায় ইঞ্জিন পুরোপুরি বিকল, নেই বিদ্যুতের সংযোগ। জাহাজে থাকা খাবারও নষ্ট হয়ে গেছে। বাইরে হাড়কাঁপানো শীত আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। এমন এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন একজন বাংলাদেশিসহ মোট ১০ জন নাবিক।

শনিবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে নিজের এই অসহায় অবস্থার কথা জানান সেখানে আটকে থাকা বাংলাদেশি নাবিক মাহফুজুল ইসলাম। তুরস্কের উপকূল থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাসতে ভাসতে জাহাজটি এখন বুলগেরিয়ার জলসীমায় প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় উদ্ধারের জন্য কোনো সহায়তা না পেয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নাবিকরা।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর কৃষ্ণসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় তেলবাহী এই জাহাজে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনের নৌবাহিনী। বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহরের’ অংশ। ঘটনার সময় জাহাজটিতে মোট ২৫ জন নাবিক ছিলেন, যাদের মধ্যে চারজনই বাংলাদেশি। হামলার পরপরই তুরস্কের কোস্টগার্ড তাদের সবাইকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে গিয়েছিল।

বিপত্তি বাধে জাহাজটি উদ্ধার করার পরবর্তী ধাপে। মাহফুজুল ইসলাম জানান, হামলার দুই দিন পর তুরস্কের কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে ১০ জন নাবিককে জাহাজটি টেনে উপকূলের কাছাকাছি আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়ে তীরের কাছে আনাই ছিল তাদের মিশন। কিন্তু ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং সনাতন পদ্ধতিতে নোঙর ফেলার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা সাগরের মাঝখানে আটকা পড়েন।

অচল ওই নৌযানে মাহফুজুল ছাড়াও আরও ৯ জন বিদেশি নাবিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে চীনের সাতজন এবং ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের একজন করে নাগরিক আছেন। মাহফুজুলের ভাষ্যমতে, তীব্র স্রোত আর ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজটি তুরস্কের জলসীমা ছাড়িয়ে বুলগেরিয়ায় ঢুকে পড়েছে। সেখানকার কোস্টগার্ডকে বিষয়টি জানানো হলেও এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে জাহাজে থাকা অপর তিনজন বাংলাদেশি নাবিক ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে দেশের পথে রওনা হয়েছেন। তারা হলেন—ঢাকার ধামরাইয়ের হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার আজগর হোসাইন এবং কুষ্টিয়ার আল আমিন। কিন্তু জাহাজটি তীরে ভেড়ানোর কাজে অংশ নিতে গিয়ে মাহফুজুল ইসলাম এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

নাবিকদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়েছে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অচল জাহাজে অবস্থান করা নাবিকদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য বুলগেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।