নতুন সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট শারার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন, বলছে জরিপ

বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের এক বছর পূর্তিতে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার প্রতি দেশের নাগরিকদের ব্যাপক সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা নেটওয়ার্ক আরব ব্যারোমিটারের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ সিরীয় নাগরিক প্রেসিডেন্ট শারার ওপর আস্থাশীল। এছাড়া, সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ৭১ শতাংশ মানুষ।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অগ্রযাত্রার মুখে বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিলে ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। সে সময় বিদ্রোহী অভিযানের নেতৃত্বে থাকা আহমেদ আল-শারা চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং বর্তমানে দেশ পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট শারা সিরিয়ার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা কাটাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনি আঞ্চলিক দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথ তৈরি করেছেন। গত মাসে ওয়াশিংটনে আল-শারার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে আংশিক নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের ঘোষণা দেন, যা দেশটির অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপ অনুসারে, সিরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক মিত্র সৌদি আরব, যাদের ৯০ শতাংশ নাগরিক সমর্থন করে। এছাড়া কাতারকে ৮০ শতাংশের বেশি এবং তুরস্ককে ৭৩ শতাংশ সিরীয় অনুকূল দৃষ্টিতে দেখে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ৬৬ শতাংশ নাগরিক ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ৬১ শতাংশের আস্থা রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের চেয়ে বেশি।

জরিপে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও শক্তিশালী সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে। সেনাবাহিনীর প্রতি ৭১ শতাংশ এবং আদালত ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি ৬২ শতাংশ মানুষ তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। এদিকে, সৌদি আরব সিরিয়া পুনর্গঠনে ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনে ২০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি প্রয়োজন।

তবে দেশটির অর্থনীতি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ১৭ শতাংশ বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট। ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের আয় জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য অপর্যাপ্ত এবং গত মাসে ৬৫ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ কম নয়। জরিপে ৭৪ শতাংশ নাগরিক বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৬৩ শতাংশ মনে করেন, অপহরণ একটি মারাত্মক হুমকি। এছাড়া, আসাদের শাসনামলে সুবিধাপ্রাপ্ত আলাউইট সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলে সরকারের প্রতি সমর্থন তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।

জরিপে দেখা যায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পক্ষে সমর্থন মাত্র ১৪ শতাংশ এবং দেশটিকে ইতিবাচকভাবে দেখে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ। আসাদের পতনের পর ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোয় ৯০ শতাংশের বেশি নাগরিক বিষয়টিকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন।

গত সোমবার আসাদের পতনের বর্ষপূর্তিতে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট শারা বলেন, ‘সরকার একটি দৃঢ়, স্থিতিশীল ও সার্বভৌম সিরিয়া গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।