অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর দাবি আফগানিস্তানের, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মিশ্র চিত্র

আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিহউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, চলতি বছর দেশটিতে গড় মূল্যস্ফীতির হার মাত্র দুই শতাংশ, যা এ অঞ্চলের অন্যতম সর্বনিম্ন। তিনি বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, খাদ্যদ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকা এবং জাতীয় মুদ্রা আফগানির মান শক্তিশালী হওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, কৃষিখাতকে শক্তিশালী করা এবং বড় অবকাঠামো প্রকল্প চালুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে আফগানিস্তান। অর্থনৈতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী আব্দুল লতিফ নজরী বলেন, ‘ইসলামী আমিরাতের অর্থনীতি-কেন্দ্রিক নীতি, দেশীয় সক্ষমতার ওপর নির্ভরতা, কৃষির শক্তিশালীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, মূল্য স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রার মান বৃদ্ধি—এসবের ফলে টানা কয়েক বছর ধরে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।’

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি টানা দ্বিতীয় বছর প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। ২০২৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আনুমানিক দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ ছিল এবং ২০২৫ সালে তা বেড়ে চার দশমিক তিন শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হলেও ব্যাপক দারিদ্র্য, জনসংখ্যার চাপ এবং বড় ধরনের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।

তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশটির জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ প্রায় আট দশমিক ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে মাথাপিছু আয় প্রায় চার শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শ্রমবাজারে ব্যাপক চাপের কারণে দেশটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ যুবক বেকার। এছাড়া, নারীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানবসম্পদ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হচ্ছে।

এই বিষয়ে আফগানিস্তান চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড মাইনসের সদস্য সাখি আহমদ পাইমান বলেন, ‘ব্যাংকিং সীমাবদ্ধতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে আফগান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।’

অন্যদিকে, আফগান অর্থনীতিবিদ আব্দুল বাসির তারাকি মনে করেন, চ্যালেঞ্জগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘এর একটি বড় কারণ বিশ্বব্যাংক নিজেই। কারণ তারা আফগানিস্তানে তাদের প্রকল্পগুলো স্থগিত করে রেখেছে এবং বিনিয়োগে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’