বিশ্ব মিডিয়ায় হাদির মৃত্যুর খবর, বিচার দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও অবরোধ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি আর নেই। গত সপ্তাহে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে এই যুবনেতার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

এনসিপির স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে মরদেহ নিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা রয়েছে, যা সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট নাগাদ ঢাকায় অবতরণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতার মৃত্যুর বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আঘাতের তীব্রতার কারণে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে রয়টার্স ও বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে হাদির মৃত্যুতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা এবং আসন্ন নির্বাচনের আগে অস্থিরতার আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা রাত ১টার দিকে প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। এছাড়া জিরো পয়েন্ট ও বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ জানান চবি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

রাজধানী ঢাকার বাইরেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। খুলনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয়। সিলেটে চৌহাট্টা এলাকা এবং সুনামগঞ্জে বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী স্লোগান দেয়। বরগুনায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। ফরিদপুরের ছাত্র-জনতাও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

দেশের অন্যান্য জেলাতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলে জামায়াতে ইসলামী এবং পিরোজপুরে জেলা বিএনপি ও জুলাই মঞ্চের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছেন। নারায়ণগঞ্জ ও শেরপুরে এনসিপির নেতৃত্বে এবং ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা ও লক্ষ্মীপুরে সাধারণ ছাত্র-জনতা সড়ক অবরোধ করে দোষীদের ফাঁসির দাবি জানান। রাজবাড়ীর পাংশায় ছাত্রদল মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিশোরগঞ্জ ও ভোলাতেও গভীর রাতে মিছিল বের হয়।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে রিকশায় ফেরার পথে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়েছিল।