আপনি পড়ছেন

দেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবুল কাশেম বিন আবু বাকারকে নিয়ে সমালোচনার কোন কমতি নেই। তাকে নিয়ে এখন কেনো এত সমালোচনা? কই আগে তো তাকে নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি। দেশি একজন জনপ্রিয় লেখক যখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রশংসিত হন তখন দেশি কিছু মানুষের গাঁ জ্বালা করে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলেও বর্হিরবিশ্ব বাংলাদেশকে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবেই চিনে।

kasem bin abubakar

কাশেম বিন আবু বাকার মুসলিম ভাবধারার লেখক। ১০০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে তার। ৮৫টিরও বেশি উপন্যাস। এদেশের মানুষ ধর্ম মানে সত্য তবে সাথে সাথে প্রেম-ভালবাসাও করে। এটা কেউ অস্বীকার করলে ভুল করবে। সমাজের বাস্তবতা এখন এটাই। লেখক সেই বাস্তবতাকে তার লেখায় তুলে ধরেছেন। আমাদের বর্তমান মিডিয়ার তিনি আলোচিত নন বলেই তাকে অশ্লিলতার একটা কালিমা দিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা সব মহলে। বিশ্ব মিডিয়া তাকে খুঁজে বের করে নিল অথচ আমরা তার নামই জানি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা নয় কি?

১৯৬৮ সালে পশ্চিবঙ্গের হাওড়া থেকে এসে ঢাকার নিউমার্কেটের মল্লিক ব্রাদার্সে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি তার বই প্রকাশের জন্য প্রকাশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে তার বইগুলো গ্রামের মুসলিম পাঠক শ্রেণির কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন তার পাঠকের মাত্র ২০ শতাংশ শহুরে। তারমানে তার পঠকের বড় অংশ গ্রামের। তখনকার সময়ে গ্রামের মানুষের পছন্দ অপছন্দের কথা শহর থেকে প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে কমই উঠে আসত। তার পাঠক শ্রেণির বড় অংশ ছিল বিভিন্ন মাদ্রাস ও গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মতামত ও তাদের ক্যাম্পাস বা পছন্দের গল্প দেশি সংবাদপত্রে সব সময়ই উপেক্ষিত।

যারা ইসলামীভাব ধারার মানুষ তাদের সংখ্যাটা দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ। আমরা তাদের যতই অস্বীকার করি, এটা আমাদের মনতেই হবে যে, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে তাদের অংশগ্রহণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী দল যখন তাদের নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করে তখন সরকারসহ সবারই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়। আবার সরকার যখন তাদের স্বীকৃতি দেয় তখন সরকার বিরোধীদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। কারণ তাদের যতই অস্বীকার করা হোক দেশের ভোট ব্যাংকে তাদের(মুসলীম জনগোষ্ঠী) ডিপোজিটের অংকটা বেশ বড়। তাই এই জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার না করে বরং তাদের উন্নয়ন ও প্রগতিশীলতার পথে যতটা সম্ভব যুক্ত করার চেষ্টা সরকারের জন্য ভালই হবে। এক্ষেত্রে সরকার যদি প্রথমে কিছুটা ছাড় দিয়ে পরবর্তীতে বড় ধরনের মান উন্নয়ন করতে পারে তবে সেটা নিন্দনীয় কিছু না। তবে সরকার এটা জানে তারা মান উন্নয়নে হাত দিতে পারবে না। স্বীকৃতির ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে আরো প্রশারিত করার তাগিদ অনুভব করে তবে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে হবে। তখন তারা নিজে থেকে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। এতে সরকার ও মুসলিম জনগোষ্ঠী উভয়েই লাভবান হবে।

kasem bin abubakar 01

আমাদের লেখকরা সবাই স্কুল ও শহুরে চরিত্র নিয়ে লেখালেখি করেন। কিন্তু মাদ্রাসা এবং গ্রামীণ পরিবেশের চরিত্র নিয়ে লেখা উপন্যাসের সংখ্যা একেবারেই কম। কিন্তু সেখানে পাঠকের সংখ্যা মোটেও কম নয়। কাশেম বিন আবু বাকার ঠিক সেই শূণ্যতার জায়গাটি দখল করেছেন বেশ দক্ষতার সাথে। সমাজে যৌনতা সব সময়ই বিদ্যমান। মুসলিম সমাজের যৌনতা হয়ত গোপন থাকে। লেখকের এটা সফলতা যে তিনি সে বিষয়টি মার্জিতভাবে ফুটিয়ে তোলার পরেও পাঠক তার লেখা পছন্দ করেছেন। তার বই কিনেছে। কাশেম বিন আবু বাকারের কোন কোন বইয়ের ৩০তম সংস্করণ পর্যন্ত বেড়িয়েছে। ফরাসী বর্তা সংস্থা এএফপিকে কাসেম জানান মেয়েরা তাকে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখত, অনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিত। আর ডাকপিয়ন তার পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিল কেননা, প্রতিদিন ১০০ চিঠি আসত তার বাড়িতে।

কাশেম বিন আবু বাকারের জনপ্রিয়তা ও তার পাঠক শ্রেণির সংখ্যা নিয়ে তাই আর বেশি কিছু বলতে হবে না আশা করি। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এমন একজন লেখককে স্বীকৃতি তো দূরের কথা জানতেও পারিনি। বিদেশী গণমাধ্যম থেকে আমাদেরকে তার সম্পর্কে জানতে হল। আর যখন তার সম্পর্কে জানা গেল তখন সাহিত্য জগতে তিনি যেন উড়ে এসে জুড়ে বসলেন। আর এ করণেই তাকে সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। আবু বাকারের সমকক্ষ অনেক কবি সাহিত্যিক বহু চেষ্টা করেও পাঠকরে কাছে পৌঁছতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে লেখক সমাজে হঠাৎ করে এমন একজন লেখক কে হয়ত অনেকেই সহ্য করতে পারছেন না। আর তার উপরে তিনি মুসলিমভাবধারার লেখক।

নান মহল থেকে যখন তার সমালোচনা তখন তার পাঠকরা হয়ত শঙ্কিত। এই পাঠকদের মনরঞ্জন করে সুবিধা নিতে এখন যদি জামাতপন্থীরা আবু বাকারকে সমর্থন করে লেখা-লেখি শুরু করে দেয়, তবেই এই সমালোচকদের স্বার্থ উদ্ধার হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ তখন তাকে ইসলামীভাবধারার লেখক বলার পরীবর্তে জামাতী বলে সহজেই তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ানো যাবে। বিতর্ক আর কলঙ্ক নিয়েই তখন ৮০ বছর বয়স্ক এই লেখককে মনে কষ্ট নিয়ে চলে যেতে হবে। একবিংশ শতাব্দির পর তার বয়স বেড়েছে, সাথে সাথে থেমে গেছে তার লেখা-লেখির হাতও। তবে মৃত্যুর আগে তকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মাননা দেয়া উচিত। তিনি দেশকে বিশ্বের কাছে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সমালোচকরা তার ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতার জায়গাটি না খুঁজে বরং তার সাফল্যের দিকগুলোর প্রশংস করুক এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক ও ঢাবি শিক্ষার্থী
ইমেইল @ This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর