জামায়াতের সঙ্গে জোটে না বললেন এনসিপির ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা

জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলীয় জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন নেতা। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে একটি লিখিত চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দলীয় আদর্শ ও রাজনৈতিক নীতির প্রশ্নে ওই নেতারা তাদের আপত্তির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেছেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা উল্লেখ করে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিভাজন সৃষ্টি করেছে।

এনসিপির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের দায় চাপানো, অন্যান্য রাজনৈতিক দলে গুপ্তচরবৃত্তি ও স্যাবোটেজ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার, এমনকি অনলাইন মাধ্যমে এনসিপি ও তাদের ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যদের চরিত্রহননের চেষ্টা এসব বিষয় দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

নেতারা আরও জানান, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, গণহত্যায় সহযোগিতা এবং সে সময়কার অপরাধের প্রশ্নে তাদের অবস্থান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও এনসিপির ঘোষিত মূল্যবোধের সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক।

চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দলের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

স্বাক্ষরকারীরা স্মরণ করিয়ে দেন, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অল্প কয়েকটি আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে তারা মনে করছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জোটের সম্ভাবনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই দলের সমর্থক কর্মী-সংগঠক ও নতুন রাজনীতিতে আস্থাশীল মধ্যপন্থী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এনসিপির প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের মনোভাব দেখাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে দলের মধ্যপন্থী সমর্থকভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সবশেষে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক জোটে না যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, কৌশল নির্ধারণে নীতিগত অবস্থানকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে; কৌশলগত সুবিধার জন্য নৈতিক অবস্থান বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনীসহ আরও অনেকে।