হাদি হত্যার বিচার: শাহবাগ অবরোধ ও মধুর ক্যান্টিন থেকে আল্টিমেটাম

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ২টার দিকে তারা শাহবাগের জুলাই স্তম্ভের নিচে জড়ো হন এবং ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে শাহবাগ ও এর আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

অবরোধ কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শহীদ ওসমান হাদিকে কোনোভাবেই কোনো নির্দিষ্ট দলের ফ্রেমে বন্দি করা যাবে না। তার আদর্শ কোনো দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। হাদি বাংলাদেশের জনতার, তাই যারা রাজনীতি করবেন, তাদের উচিত তাকে জনতার প্রতিনিধি হিসেবেই উপস্থাপন করা। তিনি আরও জানান, হাদি বেঁচে থাকতে সবসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য চাইতেন। দলগুলোর নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকলেও হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে তাদের একাত্মতা পোষণ করা উচিত। যদি তারা এই বিচারের দাবিতে সোচ্চার না হয়, তবে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জবাব দেবে।

ঢাকা-৮ আসনে ইনকিলাব মঞ্চের নির্বাচনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে জাবের স্পষ্ট করেন যে, তাদের সংগঠন কোনোদিন ক্ষমতার কাছে নিজেকে বর্গা দেবে না এবং ‘সিম্প্যাথি’ বা সহানুভূতির রাজনীতি করবে না। তিনি উল্লেখ করেন, শহীদ ওসমানের কাছে নির্বাচন ছিল পঞ্চম অগ্রাধিকারমূলক কাজ। ইনকিলাব মঞ্চ একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করে আসছে এবং যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। ওসমান হাদির ইনসাফের লড়াইকে সমুন্নত রাখাই তাদের লক্ষ্য।

এদিন বিক্ষোভে ‘আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘শাহবাগ না ইনসাফ, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘যেই হাদি জনতার, সেই হাদি মরে না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। রবিবার রাতে সংগঠনটি চার দফা দাবি ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে—খুনি ও তাদের সহায়তাকারীদের ২৪ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা, বাংলাদেশে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল, ভারত খুনিদের ফেরত না দিলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের এবং সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সংস্কার করে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করা।

অন্যদিকে, একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মঞ্চ-২৪’ নামের আরেকটি সংগঠন হাদি হত্যার বিচারকার্য ২৫ দিনের মধ্যে শেষ করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অন্যতম রূপকার শরীফ ওসমান হাদিকে দিল্লির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করে এবং ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সরকারের টিকে থাকার নৈতিক ভিত্তি থাকবে না। মঞ্চ-২৪-এর দাবিগুলোর মধ্যে নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ভারতীয় গুপ্তচরদের অপসারণ এবং দেশবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।