গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী: খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতি
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্বের দীর্ঘ পথচলার সমাপ্তি ঘটল। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির হাল ধরা এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর নেই। রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। টানা প্রায় ৪১ বছর তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশেষ অধ্যায়।
ভোটের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ঝুলিতে রয়েছে এক অনন্য ও ঈর্ষণীয় অর্জন। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এই নেত্রী সবকটি আসনেই জয়লাভ করেন, যা এক বিরল রেকর্ড।
অথচ রাজনীতির মাঠে তার আগমন ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং পরিস্থিতির শিকার। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যখন নিহত হন, তখন খালেদা জিয়া ছিলেন পুরোদস্তুর গৃহিণী। ঢাকা সেনানিবাসে দুই শিশু সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে ছিল তার সংসার। রাজনীতির জটিল সমীকরণের সঙ্গে তখন তার কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল না।
স্বামীর মৃত্যুর পর বিএনপি নেতৃত্বহীন হয়ে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়। জিয়াউর রহমানের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান। ৭৮ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেতার পক্ষে দলকে সুসংহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল। দলের ভেতর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল ও মতভেদ চরম আকার ধারণ করে। একাংশ কাউন্সিলের দাবি তোলে, অন্য অংশ এর তীব্র বিরোধিতা করে।
রাজনীতিতে জড়ানোর বিষয়ে শুরুতে খালেদা জিয়ার নিজের বা পরিবারের কোনো আগ্রহ ছিল না। প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, স্বামীর করুণ মৃত্যু তাকে ভীত ও দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলেছিল। তার বাবাও চাননি মেয়ে রাজনীতিতে আসুক। সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের বর্ণনায় তিনি ছিলেন লাজুক ও সংসারমুখী, যিনি সন্তানদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করতেন।
শেষ পর্যন্ত দলের ভাঙন রোধে নেতাকর্মীদের লাগাতার অনুরোধে তিনি ঘরের বাইরে পা রাখেন। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরের বছর মার্চ মাসে তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে উন্নীত হন। এরপর বিচারপতি সাত্তারের অসুস্থতার কারণে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৩ সালে তার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে অনেকে নির্বাচনে গেলেও তিনি কোনো ধরনের আপস করেননি। ১৯৮৭ সাল থেকে এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। টানা সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি সরকার গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কাউন্সিলে তিনি বারংবার দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতিতে তার এই আকস্মিক উত্থান তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জন্যও বড় চিন্তার কারণ ছিল। জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি দ্রুতই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতির প্রয়োজনে অনিচ্ছুক সেই গৃহবধূই ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.