যুক্তরাজ্যের শীর্ষ দানশীলদের তালিকায় ব্রিটিশ মুসলিমরা: বছরে দান ২২০ কোটি পাউন্ড

যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দানশীল জনগোষ্ঠী হিসেবে উঠে এসেছে ব্রিটিশ মুসলিমরা। থিংক ট্যাংক ইকুই-এর নতুন গবেষণা অনুযায়ী, তারা বছরে প্রায় ২২০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৩০০ কোটি ডলার) দান করেন, যা জাতীয় গড়ের চারগুণ পর্যন্ত বেশি।

লন্ডনভিত্তিক এই গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ মুসলিমদের দানের একটি বড় অংশ ঐতিহ্যগতভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্য হিসেবে দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বা স্থানীয় পর্যায়ে দানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবেদনে ইকুই উল্লেখ করেছে, ‘ব্রিটিশ মুসলিমদের দানের উল্লেখযোগ্য অংশ আন্তর্জাতিক মানবিক কাজে ব্যয় হলেও যুক্তরাজ্যভিত্তিক উদ্যোগে সহায়তা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’

এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত প্রজন্মগত ও সাংস্কৃতিক প্রভাব কাজ করছে। তরুণ ব্রিটিশ মুসলিম পেশাজীবীরা এখন ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ—উভয় ধরনের যুক্তরাজ্যভিত্তিক উদ্যোগে অনুদান দিচ্ছেন। বিশেষ করে গৃহহীনতা, খাদ্য সংকট এবং শিশু দারিদ্র্যের মতো স্থানীয় ও দৃশ্যমান সংকট মোকাবিলায় তারা এগিয়ে আসছেন।

ইকুইয়ের মতে, ব্রিটিশ মুসলিম চ্যারিটি বা দাতব্য সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্যের ভঙ্গুর জনকল্যাণ ব্যবস্থার শূন্যস্থান পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন বাধা থাকা সত্ত্বেও ছোট-বড় সংস্থাগুলো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আবাসন সহায়তা, জরুরি অর্থ সাহায্য ও মানসিক সহায়তা দিচ্ছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চাপে থাকা সরকারি পরিষেবার ভার সরাসরি লাঘব করছে, যা প্রায়শই অগোচরে থেকে যায়।’

তবে অভ্যন্তরীণ বা স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেওয়া (ডি-ব্যাংকিং), নিরাপত্তার নামে অতিরিক্ত কড়াকড়ি, সরকারি তহবিলের কঠোর শর্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সরকারি স্বীকৃতির অভাব। এসব বিষয় মুসলিম পরিচালিত দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে।

এসব বাধা দূর করতে ইকুই আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ধর্ম-বান্ধব নীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে। থিংক ট্যাংকটি বলেছে, ‘সহযোগিতা ও অন্তর্ভুক্তির নীতির ভিত্তিতে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংস্থার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক সামাজিক সংহতি বাড়াতে পারে। এটি মুসলিম উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নাগরিক জীবনে ব্রিটিশ মুসলিমদের অবদান সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।’

এছাড়া ‘ম্যাচ-ফন্ডিং’ বা সমপরিমাণ তহবিল সংগ্রহের মতো পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলো ধর্মভিত্তিক সংস্থাগুলোকে যুক্তরাজ্যকেন্দ্রিক দানে আরও উৎসাহিত করতে পারে বলে ইকুই পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই পদ্ধতি নিশ্চিত করবে যে যুক্তরাজ্যের সাহায্য ও অনুদান দিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক—উভয় ক্ষেত্রেই অসহায় মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব হচ্ছে।’