বিশ্ববাজারে চীনা অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানের দাপট, নেপথ্যে বিদ্যুতায়ন

বিদ্যুতায়নের ওপর ভর করে বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি দামি অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানের তালিকায় চীনা গাড়ি নির্মাতারা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বিক্রি বৃদ্ধি চীনা কোম্পানিগুলোর এই উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে।

কোম্পানিজ মার্কেট ক্যাপ ডটকমের তথ্যমতে, ১.৫২ ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য নিয়ে মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা টেসলা বিশ্বের সবচেয়ে দামি অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানের স্থান ধরে রেখেছে। টেসলার মালিক ধনকুবের ইলন মাস্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। এমনকি ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা টেসলার বাজারমূল্য ও শেয়ারে উল্লেখযোগ্য পতনের কারণ হয়েছে।

তালিকায় ২৮২.১ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য নিয়ে টয়োটা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এর পরেই ১৩২.৯ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চীনা ইভি নির্মাতা বিওয়াইডি তৃতীয় এবং ১২৮.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে শাওমি চতুর্থ স্থানে আছে। তালিকায় থাকা অন্য শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জেনারেল মোটরস ৭৮.৯ বিলিয়ন, মার্সিডিজ-বেঞ্জ ৬৮.৩ বিলিয়ন, বিএমডব্লিউ ৬৬.৯ বিলিয়ন, ফেরারি ৬৬.৭ বিলিয়ন, ভক্সওয়াগন ৬২.২ বিলিয়ন এবং মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া ৫৮.৩ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য নিয়ে যথাক্রমে পঞ্চম থেকে দশম স্থানে অবস্থান করছে। চতুর্থ স্থানে থাকলেও শাওমির আয়ের বড় অংশ আসে অটোমোবাইল বহির্ভূত প্রযুক্তি পণ্য থেকে; যদিও গত বছর কোম্পানিটি তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক স্পোর্টস মডেল ‘এসইউ৭’ বাজারে এনেছে।

ইউরোপিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এসিইএ) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে ইউরোপে টানা ১১তম মাসের মতো টেসলার বিক্রি কমেছে। বার্ষিক হিসাবে গাড়ির নিবন্ধন ৩৪.২ শতাংশ কমে ১২ হাজার ১৩০টিতে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে ইইউ বাজারে টেসলার শেয়ার ২.১ শতাংশ থেকে কমে ১.৪ শতাংশ হয়েছে। জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে বিক্রি ৩৮.৮ শতাংশ কমে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৪ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।

এর বিপরীতে চীনা নির্মাতারা বাজারে তাদের অবস্থান সম্প্রসারিত করেছে। এসিইএ-এর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একই সময়ে এসএআইসি মোটরের ইইউ বিক্রি ৩৯.৪ শতাংশ বেড়েছে, আর বিওয়াইডি-এর বিক্রি বেড়েছে ২৪০ শতাংশ।

ইভি উৎপাদনের ফলে প্রতিযোগিতার ধরন বদলে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী গাড়ি শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এখন আর কেবল প্রথাগত নির্মাতারাই বাজারের নেতৃত্বে নেই, বরং বিদ্যুতায়ন ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকারী পরবর্তী প্রজন্মের কোম্পানিগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ ৫০টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টিই চীনের। এর তুলনায় জাপানের ৮টি, যুক্তরাষ্ট্রের ৬টি, ভারতের ৫টি এবং জার্মানির ৪টি কোম্পানি রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের দুটি করে কোম্পানি শীর্ষ ৫০-এ স্থান পেয়েছে। তুরস্কের ফোর্ড ওটোসান ৭.৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ৪১তম এবং তোফাস ২.৯ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য নিয়ে ৫০তম স্থানে রয়েছে। এছাড়া ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডস এবং ভিয়েতনামের একটি করে কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে দামি অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।