অথচ আমরা তাদের বাঘিনী বলি...
- Details
- by বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
একজন নারী ক্রিকেটার ডোমেস্টিকে শীর্ষ পর্যায়ের একটা ম্যাচ (একদিনের) খেলে পান ৬০০ টাকা। নাহ, ভুল পড়েননি। আমি ৬০০ (ছয়শত) টাকাই বলেছি।
এই সমাজ নারীকে তখনই অপমান করা শুরু করেছে, যখন নারী বলে নারীর জন্য আলাদা অধিকার রচনার কথা উঠেছে। এই সমাজ নারীকে তখনই লজ্জায় ফেলেছে, যখন তাকে সম্মান করে বসার জায়গা করে দেয়ার শিক্ষা না ছড়িয়ে, নারীর জন্য বাসে আলাদা সিটের নিয়ম করেছে। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আজও বড় কুৎসিত, বড় নোংরা।
শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলে একজন নারী যখন ৬০০ টাকা পান, তখন সেটাকে নারীর প্রতি সমাজের অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!?
একজন পুরুষ ক্রিকেটার এনসিএল বা বিসিএল (প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট, চারদিনের ম্যাচ) খেলে পান ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে, সমতায়নের কথা বললে, একটা একদিনের ম্যাচ খেলে একজন নারী ক্রিকেটারের পাওয়ার কথা অন্তত পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু তারা পাচ্ছেন ৬০০ টাকা করে!
এটা তো গেলো সাধারণ ক্রিকেটারদর কথা, যারা বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। যারা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন, তাদের সর্বোচ্চ বেতন মাসে ৩০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার!
অথচ পাকিস্তানের মতো দেশেও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা একজন নারী ক্রিকেটারের সর্বনিম্ন বেতন ৪০ হাজার টাকার বেশি। ভারতের ক্ষেত্রে এটা ৮০ হাজার টাকার বেশি (২০১৬ সালের হিসেব)।
ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়ার কথা এখানে না বলাই ভালো।
এই অবিশ্বাস্য বৈষম্য নিয়ে আমরা আরো বেশি অবিশ্বাস্য রকমের নিশ্চুপ। আমাদের আসলে তেমন কিছু যাচ্ছে না এবং আসছেও না। এই বিষয়টা আওয়ামী লীগকে গালাগাল করা, বিএনপিকে লক্ষ্য করে তীর্যক মন্তব্য করা বা কাসেম বিন আবুবাকারকে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করে পৈশাচিক আত্মপ্রসাদে ভোগার চেয়ে কম মজার। আমরা তাই চুপ। সমাজ তাই নীরব।
নারী ক্রিকেট দল, যারা মাশরাফিদের মতোই বুকে BANGLADESH লেখা নিয়ে, লাল এবং সবুজ জার্সি, যেটা মাশরাফি- মুশফিক ও সাকিবদের গায়েও থাকে; সেটা পরেই খেলেন। তারা জিতে গেলে আমরা বাঘিনী বলে বুকের ছাতি ফুলিয়ে কয়েক মুহূর্ত উল্লাস করি। গলা ফাটাই।
কিন্তু বাঘিনীরা যে মৃত প্রায় বিড়ালের মতো জীবন যাপন করেন, তা নিয়ে আমরা নির্বিকার। ঝলমলে লাল সবুজ জার্সিটা খুলে রাখার পর বাঘিনীদের জীবন যে কতোটা বিবর্ণ, তা আমরা জানারই চেষ্টা করি না। কী অসভ্য আমরা! ছি!
অন্তত প্রকাশ্যে আমরা দেখি, নারী ক্রিকেটের কোনো আসর এলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যেভাবেই হোক বোঝায় যে, নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে তারা জানপ্রাণ এবং যা যা দেয়া সম্ভব, সবই দিচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?
এই রকম প্রায় মৃত বিড়ালের মতো লাইফ স্টাইলের কথা চিন্তা করে সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোন মেয়ে আসবে ক্রিকেটার হতে? আর নতুনরাই যদি আসতে সাহস না পায়, তবে উন্নয়নটা কিসের?
অথচ, আমরা জানি বা না জানার ভান করি থাকি যে, বিসিবিতে এমনও বহু মানুষের অস্তিত্ব আছে, যারা করিডোরে একটু হাঁটাহাঁটি বা একটু দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করেই কামিয়ে নিচ্ছেন অনেক। আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। চরমতম লজ্জা।
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর