আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে ইতিহাসও রচনা করে ফেলেছেন মাশরাফিরা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দল উঠে গেছে আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। এতোদিন ছয় নম্বরে ছিলো শ্রীলঙ্কা।

আজকের ম্যাচের আগে দেশের বাইরের কোনো ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর কোনো স্মৃতি ছিলো না বাংলাদেশের। আজ সেই আক্ষেপও ঘুচিয়ে দিয়েছেন মাশরাফিরা। আজকের ম্যাচটি সে হিসেবে সোনায় সোহাগা ছিলো বাংলাদেশের জন্য।
১০ বল বাকি থাকতে পাওয়া এই জয়ের পর আফসোস বাড়িয়ে দিচ্ছে পরিত্যক্ত হওয়া প্রথম ম্যাচটা। ওই ম্যাচেও যদি বাংলাদেশ জিততো, তাহলে সিরিজে জয়ের ট্রফিটা হয়তো শোভা পেতো মাশরাফিরই হাতে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সহজে জিতলেও ম্যাচের পরতে পরতে ছিলো অনিশ্চয়তা। যে অনিশ্চয়তার শুরু ম্যাচের তৃতীয় বল থেকেই। যখন মাশরাফির বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন টম লাথাম এবং স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো নাসির হোসেন ক্যাচটা মিস করে বসেন।
সেই টম লাথামই পরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন। যদিও পরে নাসিরের বলেই ফিরতে হয়েছে তার। তার আগে অবশ্য নিল ব্রুমকে নিয়ে গড়েছেন ম্যাচের দ্বিতীয় বৃহত্তম সবচেয়ে বড় জুটি। ১৩৩ রানের সেই জুটির পর রস টেলর করেছেন ৬০ রান। এই তিনজনের ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশকে ২৭১ রানের লক্ষ্য দেয় কিউইরা।
একটা সময় মনে হয়েছিলো হেসে খেলেই তিনশো রান করে ফেলবে এই সিরিজেই আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারানো নিউজিল্যান্ড। কিন্তু নাসিরের জোড়া আঘাতের পর তাদের ব্যাটিংটা আর সেভাবে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। পরে সাকিব ও মাশরাফিও দুটি করে উইকেট নিয়ে কাত করে দেন কিউইদের।
জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই ছয় মেরে দেন তামিম ইকবাল। গত ১৫ বছরে তামিমের ওই ছয় নিয়ে মোট তিনবার ইনিংসের প্রথম বলে ছয় মারার ঘটনা দেখলো বিশ্ব। তামিমের ছয়ের মাত্র এক বল পরেই সৌম্য সরকারকে হারায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান এই ম্যাচে খেলতে পেরেছেন কেবল আউট হওয়ার বলটাই।
সৌম্যের বিদায়ের পর ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটিটি গড়েন তামিম ও সাব্বির রহমান। ২৬ ওভার তিন বলে ১৩৬ রান যোগ করেন তারা। ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এই জুটির মাধ্যমেই।
কিন্তু অহেতুক শট খেলতে গিয়ে ১৪৩ রানের মাথায় ফেরেন ৬৫ রান করা তামিম। পাঁচ রান পর ড্রেসিংরুমে যান সাব্বিরও। হঠাৎ করে ধস নামিয়ে দ্রুত বিদায় নেন মোসাদ্দেক সৈকতও। এরপর সাকিব ও মুশফিকের ৩৯ রানের জুটিতে জয়ের আরো কাছে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৯ রানে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন সাকিবও।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পড়ে যায় বেশ চাপে। তখনই দারুণ দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের বহু বিজয়ের সাক্ষী এই দুজন ১০ ওভারে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। আর মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে। ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মুশফিক।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ব্যস্ততা শেষে বাংলাদেশকে এখন নামতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যুদ্ধে। পহেলা জুন স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লন্ডনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচ খেলবেন মাশরাফিরা।