নিজেদের আবারো ‘আনপ্রেডিকটেবল’ প্রমাণ করলো পাকিস্তান

‘আনপ্রেডিকটেবল’ দলের তমকাটা যুগের পর যুগ ধরে পাকিস্তানের নামের পাশে। হিসেবের বাইরে থেকে কিছু করে দেখানোই যেন তাদের স্বভাব! ইমরান খানের নেতৃত্বে একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনাটাও ছিল এমন। পাকিস্তান গতকালও প্রমাণ করল ‘আনপ্রেডিকটেবল’ শব্দটা তাদের নামের পাশেই ভালো মানায়। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে যাদের খুজেই পাওয়া গেল না, সেই পাকিস্তানই কিনা গতকাল হারিয়ে দিল ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের বর্তমান এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে!

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান হারিয়ে দিবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে, এমন কথা পাকিস্তানের পাঁড় সমর্থকও হয়তো ভাবেননি। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তা ছাড়া অনেক দিন ধরেই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে প্রোটিয়ারা। কন্ডিশন বিচারেও বড় সুবিধায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

অপর দিকে, রঙিন পোশাকে অনেকদিন ধরেই ছন্নছাড়া পাকিস্তান। তার উপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত ছিল সরফরাজ আহমেদের দল। কিন্তু সেই দলটাই কিনা হারিয়ে দিলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

পাকদের এমন জয়ে ‘আনপ্রেডিকটেবল’ শব্দটাই বেশি ঘুরঘুর করেছে সামনে। তবে ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করলে বলতে হবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংটাই ম্যাচ জিতিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তান কখনোই ফিল্ডিংয়ে ভালো দল ছিল না। বর্তমানেও নেই। ভারতের বিপক্ষে অন্তত তিনটি ক্যাচ ছেড়েছেন পাকিস্তানি ফিল্ডাররা। বাজে ফিল্ডিংয়ে রানও গচ্ছা গেছে অনেক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার ঠিক উল্টো রূপ।

ভারতের বিপক্ষে যে হাসান আলিকে দেখে মনে হলো বেচারা হাতে তেল মেখে হয়তো মাঠে নেমেছেন। সেই হাসান আলিই সিমানা দড়ির কাছ থেকে দৌড়ে যেভাবে ক্যাচ নিলেন, অসাধারণ। ম্যাচে অন্য ফিল্ডাররাও দারুণ ফিল্ডিং করেছেন।

আবার বোলিংয়েও দারুণ করেছেন হাসান। আট ওভার বোলিং করে মাত্র ২৪ রানে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ইমাদ ওয়াসিম, জুনায়েদ খান ও মোহাম্মদ আমিররাও দারুণ বোলিং করেছেন। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে মাত্র ২১৯ রানে গুটিয়ে দিতে পেরেছে পাকিস্তান। জবাবে বৃষ্টির আগে ২৭ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৯ রান তোলে পাকিস্তান। পরে আর খেলা শুরু না হলে, ডিএল মেথডে ১৯ রানের জয় পায় পাকিস্তান।

আসরে টিকে থাকার এই জয়টা পাকিস্তানের বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের ফসল সে কথা বোঝার জন্য ক্রিকেট বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও বললেন এমন কথা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সরফরাজ বললেন, ‘আমি মনে করি, পার্থক্য গড়ে গিয়েছে আমাদের বোলিং ও ফিল্ডিং। গতকাল (পরশু) আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং করেছি। যেখানে আলোচনা হয়েছে, আপনি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলছেন। খুব বড় ইভেন্ট। সুতরাং নিশ্চিত করতে হবে যে আলো ফিল্ডিং করছেন।’

বোলারদেরও কৃতিত্ব দিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, ‘আমরা জানি, তাদের (দক্ষিণ আফ্রিকা) একটি ভালো ব্যাটিং লাইনআপ আছে। তাই ঠিক জায়গায় বোলিং করা নিশ্চিত হতে হবে। আমরা তাদের উইকেট তুলে নিতে পেরেছি। আপনি উইকেট তুলে নিলে প্রতিটি দলই বড় চাপের মুখ পড়বে।’

পাকিস্তান অধিনায়ক যোগ করেছেন, ‘আমাদের বোলারদের কৃতিত্ব দেব আমি। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা খুব ভালো বোলিং করেছে। এবং আমাদের খুব চমৎকার ফিল্ডিং হয়েছে।’