ভারতকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জমিয়ে তুললো শ্রীলঙ্কা

ভারতকে এক সাত উইকেটের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জমিয়ে তুললো শ্রীলঙ্কা। আজ কেনিংটন ওভালে ভারতের ৩২১ রানের পাহাড় আট বল বাকি থাকতেই ডিঙিয়ে গেছে লঙ্কান সিংহরা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে এই শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিং থেকে এক ধাপ নিচে নেমে গিয়েছিলো। নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ছিলেন ইনজুরিগ্রস্ত। দলের সেরা তারকাদের কেউই দলকে জেতানোর মতো কিছু করতে পারছিলেন না। এই শ্রীলঙ্কাকে মনে করা হচ্ছিলো এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সবচেয়ে দুর্বল দল।

সেই তারাই, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এবং এবারের আসরের শিরোপা অন্যতম দাবিদার ভারতকে নিয়ে আজ ছেলেখেলাই করলো। বিফলে গেলো শেখর ধাওয়ানের দশম সেঞ্চুরি। জানুয়ারির পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরে ম্যাথুস মাঠ ছাড়লেন দলকে জিতিয়েই।

ভারতের দেয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ১১ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে লঙ্কানরা। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু ছিলো না। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তারা যেভাবে হেরেছে, তারপর তাদেরকে নিয়ে বড় কিছুর আশা করার মতো যৌক্তিক কোনো ভিত্তিই ছিলো না। এরপর আবার আজকের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত, যাদের পেস আক্রমণ এবারের আসরের অন্যতম সেরা বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকরা।

১১ রানে প্রথম উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কার পরের উইকেটগুলোও একটা একটা ঝরে পড়বে বলে যারা মনে করছিলেন, তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশাল মেন্ডিস গড়েন ১৫৯ রানের দৃঢ়তাপূর্ণ এক জুটি। এতো বড় জুটি এই ম্যাচে আর হয়নি।

এ দুজনের ব্যাটে চড়েই ভারতকে উড়িয়ে দেয়ার আত্মবিশ্বাস পেয়ে লঙ্কানরা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে দলকে নিয়ে প্রায় হাসাহাসি করার অবস্থা হয়েছিলো, সেই তারাই এবার হাসলো এবং তাদের হাসি দেখতে দেখতে নিথর হয়ে বসে থাকতে হলো ভারতীয় সমর্থকদের।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতীয় পেসাররা চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। সবচেয়ে ভয়ানক পেস আক্রমণ বলা হচ্ছিলো ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব ও জাসপ্রিত বুমরাহর সমন্বয়কে। কিন্তু ত্রয়ীকে আজ প্রায় পারার বোলারে পরিণত করেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা।

১৭০ রানে উমেশ যাদব ও ধোনির প্রচেষ্টায় রানআউট হয়ে ফেরেন গুনাথিলাকা (৭৬)। ততক্ষণে অবশ্য ভারতকে হারানোর সব প্রস্তুতিই নেয়া হয়ে গেছে লঙ্কানদের। তারপরও লক্ষ্যটা যেহেতু ৩২২-এ রানের মতো পাহাড়, সেহেতু তারপরও কিছুটা আশা ছিলো ভারতীয়দের।

কিন্তু সেই আশাটাও হাওয়া করে দেন কুসাল মেন্ডিস (৮৯), কুসাল পেরেরা (৪৭), অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (৫২*) ও আসেলা গুনারত্নে (৩৪*)। এই তিনজন বাকি থাকা রান তুলে নেন অনায়াসে। তাদের ব্যাটিং দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে ভারতের কাছে হারতে পারে শ্রীলঙ্কা। তাদের পতন হওয়া তিন উইকেটের মাত্র একটা নিয়েছেন ভারতীয় বোলাররা। বাকি দুই উইকেট গেছে রান আউটের ফাঁদে পড়ে।

বোলারদের নিদারুণ ব্যর্থতার দিনে সপ্রতিভ ছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে শিখর ধাওয়ান; আজ তিনি তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরির দিনে ধাওয়ানকে থাকতে হলো হেরে যাওয়া দলে।

ভারতের ৩২১ রানে পাহাড়ে ধাওয়ানের অবদান ১২৫। রহিত শর্মার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৫ রান। তাদের ১৩৮ রানের ওপেনিং জুটিই গড়ে দেয় ভারতের বড় রানের ভিত্তি। যেটাকে ভারত প্রাথমিকভাবে জয়ের ভিত্তি বলেও ধরে নিয়েছিলো। কিন্তু লঙ্কানদের অনন্য অসাধারণ দলীয় প্রচেষ্টার কাছে আড়ালে পড়ে গেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।

শ্রীলঙ্কার জয়ে বি- গ্রুপের সব দলের পয়েন্ট এখন সমান। সব দলই দুটি করে ম্যাচ খেলে পেয়েছে একটি করে জয়। অর্থাৎ সেমি ফাইনালের লড়াইয়ে বি গ্রুপের চার দলই এখনো টিকে আছে সদম্ভে! বি গ্রুপে এই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জমিয়ে তোলার জন্য শ্রীলঙ্কা একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে!