২৭ বছরে একবারও নয়, ১৬ দিনে দুইবার!

দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে খেলেছিলো ১৯৯০ সালের এপ্রিলে, শারজায়। তখন থেকে ২৩ মে ২০১৭ পর্যন্ত, সুদীর্ঘ ২৭ বছরে ভিনদেশে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে ১৬টি ওয়ানডে। কোনোটিতেই ধরা দেয়নি জয়। কিন্তু ২৪ মে থেকে ৯ জুন, মাত্র ১৬ দিনে দুইবার দেশের বাইরে কিউইদের উড়িয়ে দিলেন মাশরাফিরা! ২৭ বছরে যা একবারও হয়নি, ১৬ দিনেই তা হয়ে গেলো দুইবার!

ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, গত ১৬ দিনে সেটারই যেনো নতুনতম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করলো বাংলাদেশ। ২৪ মে ডাবলিনের জয় দিয়ে প্রথমবারের তো আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিয়ে ছয় নম্বরে উঠে আসেন মাশরাফিরা। ছয় নম্বর হওয়ার গৌরব নিয়ে পা রাখেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আঙিনায়।

ওই ম্যাচে তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান ৬৫ রানের দুটি ইনিংস খেলেন। তাতে ভর করেই ভেঙে পড়ে ইতিহাসের অচলায়তন। যা দুর্ভেদ্য প্রাচীরের রূপ নিয়েছিলো ২৭ বছরের পরিক্রমায়। মাশরাফিদের বুকেও যেনো ভর করে নতুন দিনের নতুন সাহস।

সেই সাহসের পাগলা ঘোড়ায় চড়ে ১৬ দিনের মাথায়, শুক্রবার সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের বাইরে এলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। যে জয়ের ফলে মাশরাফিদের সামনে এখন প্রথমবার আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার হাতছানি।

প্রথম জয়ের নায়ক ছিলেন তামিম- সাব্বির। কিন্তু দ্বিতীয় জয়ের জন্য বাংলাদেশ যখন তীর্থের কাক হয়ে বসে আছে, তামিম- সাব্বির তখন ব্যাট হাতে ব্যর্থ। দলের রান ১৩ হতে না হতেই তারা ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে।

এমনই ভীষণ চাপের মুহূর্তে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়ে লিখলেন নতুন ইতিহাস। যে ইতিহাসে বদলে গেলো একটার পর একটা রেকর্ড। তাদের হাত ধরে ওয়ানডেতে প্রথম দুইশ রানের জুটি পেলো বাংলাদেশ। পেলো একই ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরির মাত্র দ্বিতীয় নজির।

দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় বাংলাদেশকে প্রথমবার তুলে নিয়েছিলো ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। আর দ্বিতীয় জয় মাশরাফিদের দাঁড় করিয়ে দিলো একেবারে নতুন এক সম্ভাবনার সামনে। যে সম্ভাবনা প্রথমবার আইসিসির কোনো ইভেন্টের সেমিফাইনালের।

এই সম্ভবানা কে বাস্তবায়ন করা গড়া অবশ্য এখন মাশরাফিদের হাতে নেই। ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে যদি ইংল্যান্ড জিতে যায় বা ম্যাচটি যদি পরিত্যক্ত হয়, তবেই মাশরাফিরা চলে যাবেন সেমিফাইনালে।

সেটা যা হওয়ার তাই হবে, মাশরাফিরা নিজেদের কাজটা তো ঠিকঠাক করে রাখলেন! এখন ভাগ্য যদি সেমিফাইনালের সিঁড়ি কোনো কারণে সরিয়ে নেয়, কী-ই বা করার আছে? ইতিহাস তো বলে ভাগ্য সব সময় সাহসীদের পক্ষে থাকে। তো শুক্রবার সাকিব- মাহমুদুল্লাহ যে সাহসের প্রদর্শনী দেখালেন, তাতে মনে হয় না বাংলাদেশের পক্ষ নেয়া ছাড়া ভাগ্যের আপাতত আর কোনো কাজ-টাজ আছে!