আপনি পড়ছেন

কত টাকা হলে যাকাত দিতে হবে এটা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে খুব সাধারণ একটা ভুল ধারণা আছে। যেহেতু যাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি এবং এর অনাদায়ে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ আছে, তাই এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান হতে হবে।

about zakat

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং উহা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জিভূত করেছিলে তাহা আস্বাদন কর।’ (সুরা তওবা-৩৪-৩৫)

হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, তার উক্ত সম্পদকে কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপে পরিণত করা হবে। যার চোখের ওপর কালো দাগ পড়ে গেছে। (আস-সহীহ আল-বুখারী)

নিসাব পরিমান সম্পদ কারও নিকট এক বছর ধরে জমা থাকলে সেগুলোতে যাকাত দেয়া ফরজ। তবে যে সম্পদের এক বছর পূর্ণ হয় নি তাতে যাকাত ফরজ নয়। কিন্তু কেউ যদি হিসাবের সুবিধার্থে যে সম্পদে যাকাত ফরজ হয়েছে সেগুলো সাথে যেগুলোর যাকাত হয় নি সবগুলোর এক সাথে যাকাত বের করে দেয় তাহলে তা জায়েয আছে। ইসলামে অগ্রীম যাকাত দেয়া বৈধ।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন। (আল বাক্বারাহ: ১১০)

যাকাতের 'নিসাব' অর্থাৎ সর্বনিম্ন পরিমাণ যার ওপরে সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হবে তা হচ্ছে বিশ মিসকাল সোনা অথবা একশ চল্লিশ মিসকাল রূপা। গ্রামের হিসেবে পঁচাশি গ্রাম সোনা অথবা পাঁচশত পঁচানব্বই গ্রাম রূপা। তোলা হিসেবে সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা।

বর্তমান বিশ্ববাজারে রূপার দাম গ্রাম প্রতি পঁয়তাল্লিশ টাকা হিসেবে নিসাব দাঁড়ায় ছাব্বিশ হাজার সাতশ পঁচাত্তর টাকা (৪৫✕৫৯৫= ২৬,৭৭৫। যা দেশ ও মুল্যভেদে ভিন্ন হতে পারে)। অর্থাৎ এক বছর পরিবারের যাবতীয় খরচ চালানোর পরে যদি কারো সঞ্চয়কৃত টাকার পরিমাণ ছাব্বিশ হাজার টাকার ওপরে হয় তাহলে তাকে শতকরা আড়াই টাকা (২.৫%) হারে যাকাত দিতে হবে।

যাকাতের টাকা প্রয়োজন অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে দেয়া যায় আবার একাধিক ব্যক্তির মধ্যেও ভাগ করে দেয়া যায়। যাকাত আদায়ে ক্ষেত্রে এতে কোন সমস্যা নেই। তবে শর্ত হল যাদেরকে দেয়া হবে তারা যেন যাকাত পাওয়ার হকদার হয়। যাকাতের আটটি খাতের একটি হল, গরীব-অসহায় মানুষ। সুতরাং যে কোন গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া জায়েয।

দ্বীনদার গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া যেমন জায়েয আছে তেমনি ফাসেক বা পাপাচারে লিপ্ত বা আধা নামাযী ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে, তবে শর্ত হচ্ছে, যদি তাকে এর মাধ্যমে পাপাচার থেকে ফিরিয়ে আনার আশা করা যায়। অনুরূপভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন কাফিরকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে। তবে নামাযী, দ্বীনদার, গরীব মানুষকে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। আর এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া উচিৎ নয়, যার ব্যাপারে আশংকা থাকে যে, সে অর্থ হাতে পেলে গুনাহর কাজে ব্যয় করবে। এছাড়া এমন কাউকে দেবেন না যার জমানো সম্পদ সাতাশ হাজার টাকার বেশি হয়।

অনেকে মনে করেন ব্যবহৃত অলংকার বা গহনার যাকাত দিতে হয় না। প্রত্যেক মুসলিম স্ত্রীর উপর ফরজ হলো তার ব্যবহৃত গহনার যাকাত আদায় করা। হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) গহনার যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গহনার যাকাত দিতে হবে কি না এই বিষয়ে আলেমদের মাঝে কিছুটা মতভেদ আছে। আর সহীহ সুন্নাহর আলোকে গহনার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার মতটিই শক্তিশালী ।

আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট আসলেন, তার সাথে তার মেয়ে ছিল আর মেয়েটির হাতে ছিল স্বর্ণের দুটি মোটা চুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাকে কি এটা আনন্দ দিবে যে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে (এর কারণে) আগুনের চুরি পরিয়ে দিবে।

বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, তখন সে ওই চুরি দুটি নবী (সা.) এর কাছে দিল এবং বলল, এ দুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৫। সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৭৯)।

আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা আয়েশা রা. এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছে আসলেন। তখন তিনি আমার হাতে রুপার একটি আংটি দেখে বললেন, এটা কি? আয়েশা! আমি বললাম, আমি এটা বনিয়েছি আপনার সামনে সজ্জিত হওয়ার জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি তার যাকাত দাও? আমি বললাম না। তখন তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৭)

উপরের হাদীস দুটি থেকে স্পষ্ট যে, গহনার যাকাত দেয়া ওয়াজিব। সুতরাং আলেমদের মাঝে মতভেদ থাকলেও আমাদের জন্য উচিৎ ও অধিকতর নিরাপদ হলো অলংকারের যাকাত আদায় করা। নতুবা এটা আমাদের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং মুসলিম নারীদের জন্য আবশ্যক হল তার অলংকারের যাকাত দেয়া।

সোনা এবং রূপার গয়নার খাদ বাদ দিয়ে বিক্রয়মূল্যের ওপরে সম্পদমূল্য ধরতে হবে। সুতরাং যেখানে আপনার যা জমানো সম্পদ আছে সব এক করুন। এর মূল্য সাতাশ হাজার টাকার বেশি হলে যাকাত হিসাব করে দিয়ে দিন। আপনার যদি মনে হয় বেশি দিচ্ছেন, তাহলে জেনে রাখুন, আপনার দেয়া বাড়তি অংশটুকু সদকা হয়ে যাবে। দান করলে সম্পদ বাড়ে, কমে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দান মানুষের পাপ মিটিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন মিটিয়ে দেয়। (সুনানে তিরমিজি)

সম্পদের যাকাত আদায় করার উত্তম সময় রমজান মাস। রমজান মাসে যাকাত আদায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রমজান মাসের পুণ্যের কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে এই মাসে যাকাত আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন অনেক ইসলামিক স্কলার। তাই আসুন, রমজান মাসে বেশি বেশি মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করি। সামর্থ্য অনুযায়ী দান করি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর