আপনি পড়ছেন

ইতিকাফ হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইতিকাফ আরবি শব্দ, এর অর্থ অবস্থান করা বা কোন কিছুর উপর নিজেকে শক্ত ভাবে আটকে রাখা। রমজানের শেষ দশ দিনে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করাই হচ্ছে ইতিকাফ। ইতিকাফ সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ইতিকাফ মুতাকিফকে সকল গুনাহ থেকে বিরত রাখে। এবং ইতিকাফের কারনে যে সকল নেক আমল করতে না পারে তার সওয়াবও আল্লাহ তাআলা তার আমলে লিখে দেন।’ (মিশকাত শরীফ)

itikaf tips

ইতিকাফ নামের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত কিন্তু জানি না ইতিকাফের আদব সম্পর্কে। ইতিকাফের শর্ত হচ্ছে রোজা রাখা, পবিত্র থাকা, জামাতের সাথে নামাজ পড়া। আপনি ইতিকাফে থাকা অবস্থায় কোন কিছু কেনা বা বিক্রি করতে পারবেন না। যদি তা করেন তাহলে ইতিকাফ বিফলে যাবে। এছাড়া ইতিকাফ অবস্থায় কোন কাজ ব্যতীত মসজিদের বাইরে অযথা ঘোরাঘুরি, প্রয়োজন ছাড়া অন্য আলাপ আলোচনা করলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

অনেকে ইতিকাফ থাকা অবস্থায় মসজিদে সাথে মোবাইল রাখেন। আবার অনেকে খবরের কাগজ পড়েন। এতে ইতিকাফ নষ্ট হবে না কিন্তু আদবের খেলাফ হবে। তাই এই সময়টায় এসব থেকে দূরে থাকাই ভাল। আর যদি খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে তাহলে ফোনে প্রয়োজনীয় কথার বাইরে কোন কথা বলে বা খবর কাগজ পড়ে অযথা সময় নষ্ট করা থেকে দূরে থাকুন।

ইতিকাফের নিয়ম আপনার খাবার মসজিদে কেউ দিয়ে যাবে। কিন্তু কোন কারণে মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে আপনি খাবার আনার জন্য বাসায় যেতে পারবেন। এতে আপনার ইতিকাফ ভাঙবে না। তবে খাবার আনার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করা যাবে না। আপনি যদি অন্য কাজে অল্প সময়ও ব্যয় করেন তাহলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য ঘটনাক্রমে আপনার বাসায় খাবার প্রস্তুত না হলে সেজন্য অপেক্ষা করতে পারবেন। সবচেয়ে ভাল হয়, বাসায় আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে রাখুন যেন খাবার আনতে গিয়ে আপনার অপেক্ষা না করতে হয়।

আপনি ইতিকাফরত অবস্থায় মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার পথে কেউ সালাম দিলে সালামের উত্তর বা কাউকে সালাম দিতে পারবেন। চলতে চলতে কারো সাথে অল্প স্বল্প কথাও বলতে পারবে এতে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় চলতে চলতে রোগীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু এর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতেন না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস- ২৪৭২)

আপনি ইতিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন না। বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। যদি কেউ সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছিলো ঐ দিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর তা সামনের রমযানেও কাযা করতে পারবে।

এজন্য সে কোন একদিন সূর্যাস্তের পর থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে। অবশ্য রমযানের বাইরে ইতিকাফটি কাযা করতে চাইলে দিনের বেলা নফল রোযাও রাখতে হবে। আর এই ইতিকাফটি নফল ইতিকাফ হিসাবে গন্য হবে।

আপনি ইতিকাফ থাকা অবস্থায় মসজিদের ইস্তেঞ্জাখানা না থাকলে ইস্তেঞ্জার জন্য মসজিদের বাইরে বা আপনার বাসাতে যেতে পারবেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্থায় ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।’ (সহীহ বুখারী ১/২৭২; সহীহ মুসলিম ১/১৪২)

জানাযার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলেও আপনার ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আপনি ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরের জানাযার নামাযে শরিক হতে পারবেন না। বের হলে সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৬৫)

মসজিদ মনে করে যদি আপনি মসজিদের মূল সীমানার বাইরে চলে যান প্রকৃতপক্ষে যা মসজিদ নয় তাহলে আপনার ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ইতিকাফে বসার আগে প্রত্যেকের মসজিদের মূল সীমানা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, মসজিদের সিড়ি, ইমাম সাহেবের হুজরা, ওযুখানা, মক্তবঘর এ স্থানগুলো মসজিদের মূল সীমানার অন্তর্ভুক্ত নয়।

ইতিকাফের ফযীলত নারী, পুরুষ সকলের জন্য। দের জন্যে নির্দিষ্ট নয়। বিবাহিতা নারী তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতিকাফে বসতে হবে। কেউ চাইলে স্বামী-স্ত্রী একই স্থানে ইতিকাফে বসতে পারেন। কিন্তু শর্ত হল ইতিকাফ থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীসূলভ ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি অসাবধানতায় হয়েই যায় তাহলে তাদের ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। এবং পরবর্তিতে ওই দিনের কাযা আদায় করে নিতে হবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলিত হইও না।‘ (সূরা বাকারা- ২: ১৮৭)

ইতিকাফরত অবস্থায় কেউ আপনার সাথে দেখা করতে এলে তার সঙ্গে আপনি কুশল বিনিময় করতে পারবেন। কিন্তু অনর্থক গল্প করা জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা মোটেই ভালো নয়।

ইতিকাফ অবস্থায় অতিরিক্ত কথাবার্তা ও গল্পগুজব যেমন মাকরূহ তেমনি মসজিদে চুপচাপ সময় কাটানোও মাকরূহ। তাই ইতিকাফ থাকা অবস্থায় আমাদের উচিত বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বেশি খুশি হন। এছাড়া বেশি বেশি দোয়া, দরুদ, হাদিস ও নফল নামাজ আদায় করতে হবে।

আপনি ইতিকাফে বসেছেন তাই মসজিদের স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে আপনি আপনার নিজ প্রয়োজনে মসজিদের লাইট, ফ্যান ব্যবহার করেছে।৷ তাই ইতিকাফ শেষে আপনার ব্যবহৃত অতিরিক্ত বিল অনুমান করে মসজিদের দানবাক্সে দিয়ে আসতে ভুলবেন না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর