আপনি পড়ছেন

নয়নাভিরাম নিঝুম দ্বীপ। ঢাকার নিত্য-নৈমত্তিক ব্যস্ততা আর কোলাহলকে এক পাশে সরিয়ে রেখে এক-দুইদিনের রিফ্রেশমেন্টের জন্য নিঝুম দ্বীপ হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। তার ওপর আপনার যদি প্রকৃতি ও পশু-পাখির প্রতি আলাদা আকর্ষণ থাকে তাহলে বলতে হবে, ঘুরার জন্য আপনার ঠিকানা নিঝুম দ্বীপই হওয়া উচিত।

nijhum island one

নামে দ্বীপ হলেও এটি আসলে কোনো দ্বীপ নয়। এটি বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চরের সমন্বয়ে ১৪,০৫০ একরের বিশাল এক চর। ১৯৭৯ সালে ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামকরণ করার আগে এই চরের নাম ছিলো চর ওসমান, বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান, চর মুরি ইত্যাদি।

বিশাল আয়তনের এই নিঝুম দ্বীপ এখন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণস্থল। ইতোমধ্যেই এটি ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

নিঝুম দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি অনুযায়ী দ্বীপটিতে তখন হরিণের সংখ্যা ছিলো ২২,০০০! হরিণের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত নিঝুম দ্বীপে আপনি খুব সহজেই হরিনের দেখা পেয়ে যেতে পারেন।

হরিণ ছাড়াও দ্বীপটিতে মেছো বাঘ ও খেকশিয়াল রয়েছে। আর আছে মহিষ। এদের কোনোটিই হিংস্র প্রাণী নয়। সুতরাং দ্বীপে নেমে আপনি নিশ্চিন্তেই ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে আপনি দেখা পাবেন হাজার রকম পাখির। নিশি বক, কানি বক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানা জাতের মাছরাঙ্গা থেকে আরও নাম না জানা কতো পাখি।

চাইলে পাখি দেখা ও সাগরে ঘুরার জন্য ট্রলারও ভাড়া করতে পারেন। স্থানীয় গাইডরাই আপনাকে হরিণ ও পাখির আবাসভূমিতে নিয়ে যাবে।

nijhum island

ইলিশের মৌসুমে দ্বীপে আপনি খুব সস্তায় ইলিশ মাছ কিনতে পাবেন। তবে ইলিশের মৌসুমে অর্থাৎ বর্ষাকালে এই দ্বীপে এলে আপনাকে কাদায় মাখামাখি হতে হবে। এই কাদাতে মাখামাখি হয়ে যাওয়াতেও এক ধরণের আনন্দ আছে। ইট-পাথরের ঢাকায় বসে এই আনন্দের ছোঁয়া পাওয়া কোনোকালেই সম্ভব নয়।

নিঝুম দ্বীপে গিয়ে থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই। পর্যটন রিসোর্ট থেকে শুরু করে এখানে আছে কম দামের বিভিন্ন হোটেল ও বোর্ডিং। প্রতি রাতের ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ হাজার টাকার ভিতরেই হয়ে যাবে।

তবে কোনো হোটেলেই আপনাকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ দেয়া হবে না। কারণ দ্বীপে এখনও বিদ্যুৎ যায়নি। তাই সোলার প্যানেল অথবা জেনারেটরই ভরসা। তাই যে নির্দিষ্ট সময়টুকু জেনারেটর চলবে সে সময়ে মোবাইল চার্জ দেয়াসহ আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিন।

নিঝুম দ্বীপে যাওয়াটাকে অ্যাডভাঞ্চারাস করতে চাইলে চরের মাঝে ক্যাম্পিংও করতে পারেন। প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টির কারণে কোনো ডাকাত বা জলদস্যুর হানা দেয়ার সুযোগ নেই।

খাবার-দাবার নিয়েও খুব বেশি একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। স্থানীয় নামার বাজারে প্রায় সারাদিনই চা-নাস্তা-খাবার পাওয়া যায়। হোটেলে একদম তাজা মাছ ভাজা পাবেন। অথবা তাজা মাছের তরকারি। বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে সাগরের পারে বার-বি-কিউও করা যেতে পারে। মেছো-বাঙালি হলে মাছের প্রকৃত স্বাদ আপনি নিঝুম দ্বীপেই পাবেন।

নিঝুম দ্বীপে যেতে হলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাওয়াটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ রুট। এমভি পানামা-২ ও এমভি টিপু-৫ নামে দুটি লঞ্চ নিয়মিত হাতিয়ার তমরুদ্দি পর্যন্ত চলাচল করে। ভাড়া ডেকে গেলে জনপ্রতি ২২০ টাকা, আর কেবিনে ৮০০ টাকা সিঙ্গেল ও ১৫০০ টাকা ডাবল। প্রতিদিন বিকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে এই লঞ্চ দুটি ছেড়ে যায়। তমরুদি পৌঁছে আপনাকে নামার বাজার যাওয়ার গাড়ি ঠিক করে নিতে হবে।

nijhum island two

বাসে করে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে নোয়াখালির বাসে করে মাইজদী সোনাপুর যেতে হবে। ভাড়া পড়বে ২৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। সেখান থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত ৩০০-৪০০ টাকায় রিজার্ভ বেবি ট্যাক্সি পাওয়া যায়। সেখান থেকে ট্রলার রিজার্ভ করে একেবারে সোজা নিঝুম দ্বীপ। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে নিতে হবে। নদীর জোয়ার-ভাটার কথা বিবেচনা করেই ট্রলার রিজার্ভ করতে হবে।

বছরের যে কোনো সময়েই নিঝুম দ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যেতে পারে। তবে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকাল। কারণ ওই সময় সাগর তুলনামূলক শান্ত থাকে। শীতকালে গেলে শীত তাড়ানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে নিয়ে যেতে হবে। ওখানে গেলে শীতের প্রকোপ প্রচণ্ড রকম বেড়ে যাবে।

সবকিছুই জানা হলো। এবার রওয়ানা হবার পালা। কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করে ঘুরে আসুন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপ। জীবনের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে কয়েকটি দিন।