আপনি পড়ছেন

বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এখানে এত মুসলিম বিদ্বেষ কেন? কেন নারীবাদ বা সেক্যুলারিজম এত জম্বি টাইপের এই দেশে?

abu taher tarekআবু তাহের তারেক। কবি, অনুবাদক, সমালোচক।

এইরকম জম্বি সেক্যুলারিজম কি মুসলিমপ্রধান দেশ মালয়েশিয়া বা মালদ্বীপে আছে?

পর্তুগালের বা ইউরোপের নারীবাদীরা ঠিক যা করতে চায়, বাংলাদেশের নারীবাদীরা কি সেইরকম কিছু করে?

কেন ইসলাম এবং ইসলামের পোশাকই বাংলার নারীবাদীদের মূল টার্গেট হইল?

তসলিমা নাসরিনরা যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সমস্যার কথা বলে, দুঃখজনকভাবে সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজরে দেশের আলেম উলামারাও অউন করেন।

তসলিমার সমালোচনায় আমরা তারে ইসলামবিদ্বেষী যত বলি, তার ছিটেফোঁটাও এই সমাজব্যাবস্থা নিয়া তার অভিযোগরে আমলে নেই না।

পয়লা কথা হইল, মৌলভীরা এদেশের শাসন কাঠামোর নিয়ন্ত্রক না। উনারা প্রচলিত শাসন কাঠামোর বেনিফিশিয়ারি মাত্র।

দেশে মেম্বার, চেয়ারম্যান, মাতবর, নেতা, এমপিদেরই শাসন চলে মোটাদাগে। মসজিদের ইমাম বলেন, ভার্সিটির মাস্টার বলেন; তাগো নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেউই নাই।

ইমামরা কোনদিনই পঞ্চায়েতের মাতবরদের মতের বাইরে ফতোয়া দিয়া টিকতে পারে না। বেশীরভাগ সময়, ইমামরা ফতোয়ার মাধ্যমে মাতবরদের ইচ্ছারেই লিগালাইজ করেন।

অন্যদিকে মৌলভীদের খুশ রাখার খায়েশে, মাতবররাও সমাজে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী যারা; যেমন নারীদের উপ্রে ইসলামের নামে কড়াকড়ি আরোপ করেন।

মাতবররা মূলত পেটের ধান্ধায়ই নিজেগো মাতবরী জারী রাখবার চায়। এতে তারা ইসলামরে মৌলভীদের মাধ্যমে ইউজ করে মাত্র।

বাংলাদেশে সেক্যুলার এবং নারীবাদী কারা? - যারা সমাজে কম শক্তিশালী থাকে নাই আর, তারা। এরা প্রচলিত মৌলভী আর মাতবরদের সমাজব্যাবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব রাখলেও, তাগো পয়লা শত্রু ইসলাম আর মৌলভীরাই। মাতবররা তাগো শত্রু তালিকায় নাই।

সেক্যুলারিজম এবং নারীবাদ মূলত এদেশের মাতবর আর মৌলভীদের প্রচলিত সমাজব্যাবস্থার প্রতি অনাস্থার নাম। কিন্তু এই অনাস্থা ইসলাম বিদ্বেষে গেল কেমনে?

সেক্যুলার রাষ্ট্রের নামে ইসলামরে পাবলিক স্পেইস থাকি সরাইতে চায় কেন সেক্যুলাররা? কেন এদেশের নারীবাদ শুধু পোশাক বিদ্রোহেই লিমিটেড রইল?

আমরার নারীবাদী আর সেক্যুলাররা মূলত এদেশের এলিট ক্লাসের সন্তান। এরা প্রচলিত সমাজব্যাবস্থার নিয়ন্ত্রক মেম্বার-চেয়ারম্যান-মাতবর-এমপি-উচ্ছশিক্ষিতদের পোলামাইয়া। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়ন্তাদের পোলাপাইন তাগো আব্বাদের পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাইতে না পাইরা, তাগো টোটাল ঝাল ইসলামের গায়ে ঝাড়তেছে।

মনে রাখন দরকার, মৌলভিরা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থার নিয়ন্ত্রক না, নিয়ামক মাত্র।

এদিকে, নারীবাদী আর সেক্যুলারগো ইউরোপজাত শিক্ষা তাগো মনের অজান্তে ইউরোপের স্বার্থের পক্ষেই কাজ করে।

তাই তারা মুসলমানরেই দুনিয়ার তাবৎ সমস্যার মূল মনে কইরা বসে। এরা তাই, মৌলবাদ নামক পারমানবিক শব্দ দিয়া মুস্লিম নিধনে আম্রিকার সহযোগী হয়।

(পারমাণবিক বোমা যেমন হিউম্যান বিইংরে মিসমার করি দেয়, মৌলবাদ তেমন মুসলিম-মুসলমানিত্ব মাত্ররেই নস্যাত করবার চায়। মৌলবাদ তাই পারমানবিক শব্দ।)

দেশের ডানপন্থীরা সেক্যুলারদের নিয়া যত চিন্তিত, দেশে সেক্যুলার কেন হয়- তা নিয়া তত ভাবিত না। র‍্যাডিক্যাল সেক্যুলারিজম আর র‍্যাডিক্যাল ইসলাম দুইই একে অপরের অস্ত্বিত্বের পরিপূরক হইয়া দাঁড়াইছে।

এই অবস্থা থাকি উত্তরণের খুব সহজ পথ খোলা নাই।

মৌলবাদরে মূল টার্গেট করার মাধ্যমে লুটেরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মূল প্লেয়ারদের আমরা নির্বিগ্নে লুটপাট চালাইতেই দেই আসলে। এদিকে আমরা যারে মৌলবাদ কই, সে ত পশ্চিমের শেখানো মৌলবাদের বুলি মাত্র।

এদিকে, সেক্যুলারিজমের নাম কইরা ইসলামরে পাবলিক স্পেইস থাকি সরাইলে, আমরার প্রচলিত সমাজ অর্থনীতিতে কোন বদল ত হইবই না; বরং লুটেরা সমাজব্যাবস্থারে আরো স্মুদ, আরো বাঁধাহীন করি দেওয়া হই।

বিষয় হইল, কি ডান কি সেক্যুলার দুইই প্রচলিত সমাজব্যাবস্থার অংশীদার এবং ফলভোগী। এবং দুইই আসল শত্রুরে এড়াই যাইতেছে।

বামরা কি সেক্যুলার বা ডান থাকি আলাদা কিছু করতেছে?

ইসলামিস্ট এবং ডানরা যতদিন নিজেদের প্রশ্ন করতে পারব না- কেন এদেশের সেক্যুলার এবং নারীবাদীরা তাগো প্রতি অনাস্থাশীল, যতদিন সেক্যুলার এবং নারীবাদীরা পুরুষতান্ত্রিক পুঁজিবাদি সমাজব্যাবস্থার মূল হোতাদের বিরুদ্ধে না খাঁড়াইতে পারব, ততদিন মুসলমান- সেক্যুলার দ্বন্দ্ব চলতেই থাকব।

লেখক: কবি, অনুবাদক, সমালোচক।
প্রকাশিত বই: ফের্নান্দ পেসোয়ার নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), নাগরি প্রকাশ।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর