আপনি পড়ছেন

বিশ্বায়নের যুগে মানুষের চিন্তা-চেতনায় আমূল পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবে এগিয়ে নিতে কি পেরেছি আমাদের সভ্যতা ও কৃষ্টি-কালচার? সভ্য মানুষ হচ্ছি ঠিকই, তবে আদর্শিক মানুষ হওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ার মত না। আমরা সবাই লোক দেখানো দেশপ্রেমিক বটে, সুযোগ পেলে দেশ বেচতেও দ্বিধা করি না। বৈশ্বিক এত পরিবর্তন তবু মানুষ কেবল অপরিবর্তিত। আমাদের মেধা আছে- মেধাটুকুকে কাজে লাগনোর সদিচ্ছা আজ দুঃখজনক। আমরা না হয় হেরে গেছি তাতে কি, আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে বলতে গেলে বলব, আমাদের প্রজন্ম এ বিশ্বকে জয় করবেই।

next genaretion

মানুষ দিনদিন প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কেউই অস্বীকার করছে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর অপপ্রয়োগ বলা বাহুল্য। এত উৎকর্ষতার মাঝেও মানুষ নিজেকে সুরক্ষার জন্য অন্যকে ধ্বংসের মহড়ায় ব্যস্ত। মানুষের দ্বারাই তৈরি হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংসের মারণাস্ত্র। অতিপ্রযুক্তি নির্ভর হওয়াতে মানুষ আজ পৃথিবীর জন্য হুমকির কারণ। তাই বাঁচতে হলে বাঁচাতে হবে প্রজন্মকে। এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের রোপণকৃত বৃক্ষের ফল আমরাই ভোগ করব। সেগুন গাছের কাঠ ভাল, তবে ফল খেতে চাইলে আম জামরুল গাছের বিকল্প নাই। কী ফলের স্বাদ নিতে চাচ্ছেন সেটা মাথায় রেখে বীজ বোনা বুদ্ধিমানের কাজ। ভুলে যাবেন না নিম গাছও উপকারী। দেখা গেছে, ইদানীং বাবা-মায়েরা সন্তানকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তিত। অনুকরণীয় এসব বাবা-মায়েরা অসময়ে অতিরিক্ত ফল লাভের আশায় সন্তানের উপর স্টিম রোলার চালাতেও কার্পণ্য করেন না। নিজেদের স্বার্থে সন্তানকে হাইব্রিড বানিয়ে ফেলছি। মেরে ফেলছি সন্তানের আবেগ স্বপ্ন ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে তাকে করে তুলছি যান্ত্রিক অতিআধুনিক। ফলাফল চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি মারাত্মক সামাজিক বিপর্যয়। ফলে আজ আমার আপনার সন্তান মানসিক হতাশাগ্রস্থ।

অন্য দিকে আপনি যদি এই শিশুটিকে ফুল ভেবে সঠিক পরিচর্যা করতেন, আর পরিচর্যাকে বিনিয়োগ ভাবলে সেক্ষেত্রে বিনিময় অবশ্যই পেতেন। আজকের বিশ্বকে জানান দিতে চাইলে একটি শিশুই হতে পারে আপনার জীবন দর্শন। সেখানে তারুণ্য হবে হাতিয়ার। দেখা গেছে, প্রত্যেকটি সভ্য নগরায়ন কোনো না কোনো শিশুর স্বপ্নের রূপান্তর, তারুণ্য ত্বরিত গতির রূপায়ন। এটাও পরিক্ষিত, যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুর বসবাসের অনুপযোগী একটি নগরকে জীবনের পূর্ণরূপ দেওয়ার স্বপ্ন দেখাই স্বাভাবিক। তার সে পৃথিবীতে মানুষ অন্তত প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে চাইবে। অন্যদিকে যে শিশুটি তার দেশকে রসাতলের দিকে যেতে দেখেছে, ওই শিশুটির মাঝে দেশপ্রেম থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু না।

শিশুদের প্রতি অবহেলা আত্মঘাতের নামান্তর। তাই জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য শিশুদের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। জাতীয় উন্নয়নে শিশুদের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশু যদি অনুকূল পরিবেশ ও পরিচর্যা লাভ করে তাহলে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠবে। অজ্ঞতা, অযত্ন, আর অবহেলার কারণে আমরা যেমন ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছি আমাদের মূল্যবান সম্পদ। ঠিক একইভাবে মাত্রাতিরিক্ত অনুশাসনের ফলাফলও খুব যে ভাল ঠেকছে তাও না। তবে শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে। শিশুদের কল্যাণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা জরুরি। বর্তমান বিশ্বায়নের যুুগে শিশুদের সুনাগরিক ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে সে শিক্ষা কেবল ছক বাঁধা হলে চলবে না, এর পাশাপাশি চাই নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের সমন্বয়।

আমরা জানি, পরিবার হলো প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক এবং মৌলিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার শাশ্বত বিদ্যালয়। শিশু প্রথম শিক্ষা লাভ করে তার পরিবার থেকে। তাই তার নিজ পরিবারের পরিবেশ, আনন্দময় ও শিক্ষাপোযোগী হতে হবে। শিশুবান্ধব পরিবেশে শিক্ষার ব্যাপারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য বড় সদস্যদের ভূমিকা থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সবসময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। শিশুর পরিবারে থাকতে হবে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ এবং বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। শিশু মনে দাগ কাটতে পারে এমন অশোভন আচরণ থেকে পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে হবে। শিশুর সামনে গাল মন্দ, ঝগড়া-ঝাটি, মিথ্যা কথা বলা, ছলনা করা, অনৈতিক আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি মূহুর্তে খেলার ছলে শিশুকে নতুন করে শেখাতে হবে। শিশুকে সবসময় হ্যাঁ বলতে হবে, শিশুকে কখনো না বলা যাবে না। টেলিভিশনে শিশুমূলক অনুষ্ঠান দেখার জন্য শিশুকে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, পরিবার হলো শিশুর আনন্দমূলক শিক্ষার এক বিশাল পাঠশালা।

এছাড়াও শিশুর প্রতিভা বিকাশে সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক পরিবেশ দ্বারা শিশু ব্যপকভাবে প্রভাবিত হয়। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিশু-কিশোররা শিক্ষা লাভ করে থাকে। সুস্থ, সুন্দর সামাজিক পরিবেশ প্রত্যেকটি শিশু-কিশোরের মেধা ও মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের শিক্ষার জন্যে সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজ হতে হবে শিক্ষা উপযোগী। শিশুকিশোরদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সমাজের। তাই সমাজকে শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, ক্লাব, পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। বৃত্তিমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের সামাজিকভাবে উৎসাহিত করতে হবে। সমাজকে নিশ্চিত করতে হবে শিশুকিশোরদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের সু-ব্যবস্থা। বিদ্যালয় থেকে শিশুশিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের মানুষকে। প্রতিটি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, বেড়ে ওঠা, আচরণ সহ সকল বিষয়ে সমাজের মানুষকে সচেতন ও সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

আমাদের শিশু-কিশোররা যদি বিপথগামী হয় তা হলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সুতরাং যে কোনো মূল্যে আমাদের সমাজের অবক্ষয় রোধ করতে হবে। পারিবারিক পরিবেশ সুষ্ঠু ও মানবগঠন উপযোগী করতে হবে, এতে নিতে হবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, সামাজিক ও পারিবারিক উদ্যোগ। পরিবার থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনে শিশু কিশোরদের গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশু কিশোরদের পাশে দাঁড়ানো এবং তরুণ ও যুবসমাজকে জাতি গঠনে কাজে লাগাতে হবে। নচেৎ সামাজিক বিপর্যয় কেটে ওঠা সম্ভবপর নয়। শিশু-কিশোরদেরকে দেশপ্রেমের শিক্ষায় উদ্ভূত করে পৃথিবীকে করতে হবে বর্ণিল। বলতে হবে, বুঝাতে হবে এ পৃথিবী আমাদের। অন্তত আমাদের জন্য হলেও সাজাই পৃথিবী, আগত প্রজন্মকে স্বাগতম।

আবু রায়হান মিসবাহ
সম্পাদক, দৈনিক গণমাধ্যম।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর